বাঁশের তৈরী চোঙা ফাঁদে ১১ লাখ ইঁদুর নিধন
রংপুরে ইঁদুরের উপদ্রব থেকে রোপা আমন ধানের ক্ষেত রক্ষায় বাঁশের তৈরী চোঙা ফাঁদের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। গত আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে ফসল রক্ষায় ১১ লাখেরও বেশি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। ইঁদুর নিধনে বাঁশের চোঙা ফাঁদসহ প্রয়োগ করা হচ্ছে বিভিন্ন ফাঁদ আর কৌশল। কৃষক থেকে কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টা আর কৃষকদের বিভিন্ন কৌশলের ফাঁদে এবার এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় মারা পড়েছে ১১ লাখ ৬০২টি ইঁদুর। ফলে রংপুর অঞ্চলে আমনের বিপুল সংখ্যক ফসল রক্ষা পেয়েছে।
রংপুর অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ বলছে, দেশে প্রতি বছর ইঁদুরের কারণে ১০-১২ লাখ টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে থাকে। ইঁদুর প্রতিদিন তার শরীরের ওজনের ১০ গুণ পর্যন্ত খাবার নষ্ট করে। ইঁদুরের মলমূত্র ও লোম খাদ্য দ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ, কৃমিরোগসহ ৩৩ প্রকারের রোগ ছড়ায়। প্লেগ রোগের বাহকও এই ইঁদুর। ইঁদুর মাঠের ও ঘরের ফসল নষ্ট করা ছাড়াও বৈদ্যুতিক তার কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। টেলিফোনের তার কেটে টেলিফোন অচল করে দেয়, কম্পিউটারসহ ঘরের কাপড়-চোপড়, কাগজপত্র কেটে নষ্ট করে। এছাড়াও রাস্তাঘাট, বাঁধ, রেললাইনে ইঁদুরের সৃষ্ট গর্তের কারণে বন্যার সময়ে পানিপ্রবাহে রাস্তা, বাঁধ ও রেললাইনের ক্ষতি করে থাকে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, রোপা আমন মৌসুমে রংপুরেই ৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫২টি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। এ অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ইঁদুর নিধন হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধায় ৫৪ হাজার ৭৪০, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২১ হাজার ৯১৩টি, লালমনিরহাটে ৩৪ হাজার ১৫১টি, নীলফামারীতে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৬টি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। কৃষক ও কৃষি বিভাগের লোকজন ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করেছেন।
চলতি রোপা আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ৬ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি বছর আমন মৌসুমে উৎপাদিত ফসলের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যায়। শুধু আমন মৌসুমে মোট উৎপাদনের ছয় শতাংশ ইঁদুরের খাবারে পরিণত হয়। গমের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ, আলুর ৬ শতাংশ, শাক-সবজির ৫ শতাংশ, নারিকেলের ১০ শতাংশ ও আনারসের ১০ শতাংশ ফসল খেয়ে ফেলে ইঁদুর।
পানি সেচের নালার ৭-১০ ভাগ পানি ইঁদুরের কারণে নষ্ট হয়ে থাকে। কোন স্থানে এক জোড়া ইঁদুর এক বছরে থাকলেই ৩ হাজারের বেশি বংশবৃদ্ধি করে। দিন দিন রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলায় ইঁদুর নিধনে সচেতনতা বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে রোপা আমনের খেতে বাঁশ দিয়ে তৈরি চোঙা ফাঁদ পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
রংপুরের কাউনিয়া,পীরগাছা ও বদরগঞ্জ সহ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। বেড়ে ওঠা ধান গাছগুলোর কোথাও কোথাও কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে ইঁদুর। ওই জমিতে ধান গাছগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করে মরে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা ইঁদুর নিধনে জিংক পাউডার, গ্যাস ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন বিষ ব্যবহার করেন।তেমন সুফল না পাওয়ায় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বাঁশের সাহায্যে চোঙা ফাঁদ তৈরি করেন। রাতে ধান খেতে এ চোঙা ফাঁদ পেতে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা করছেন।
রংপুর পীরগাছা উপজেলার অন্যদনাগড় এলাকার চাষি রহিম উদ্দিন বলেন, আগে গ্রামের কৃষকরা ইঁদুরের যন্ত্রণায় অসহায় হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন আমরা নানাভাবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছি। এ বছর চোঙা ফাঁদ ব্যবহার করায় ইঁদুরের উপদ্রব অনেক কমেছে। আমি চোঙা ফাঁদ ব্যবহার করছি। আমন ধানের খেতে প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫টি ইঁদুর মারা পড়েছে। চোঙ্গা ফাঁদ পদ্ধতিতে খরচ কম।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, প্রতি বছরই মোট উৎপাদনের একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যাচ্ছে। ইঁদুর নিধন অভিযানের ফলে এখন আবাদের একটি অংশ ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা হচ্ছে। আমরা বাঁশের চোঙা ফাঁদসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে ইঁদুর নিধনে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। বাঁশের চোঙ্গা ফাঁদ পদ্ধতি একটি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি।
এএজেড