সাশ্রয়ের আশায় বিক্রয়কেন্দ্রের ভোগান্তি
বাজারে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা। সে চাল খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের মাধ্যমে ৩০ টাকায় পাওয়া যায়। তাই নিম্ন আয়ের মানুষ ওএমএসের চাল কিনতে বিক্রয়কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে থাকেন। তবে শেষ অপেক্ষার ফলাফল অনেকেই চাল না পেয়ে মলিন মুখে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) জয়পুরহাট শহরের ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত পৌরসভার রোডে ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। কিছুটা সাশ্রয়ের আশায় বিক্রয়কেন্দ্র ও ট্রাকের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে।
হতাশ ৭০ বছর বয়সী সিরাজুল ইসলাম। বয়সের ভারে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। বসে থাকতে যেন তার কষ্ট হয়। নিজের তৈরি বাঁশের লাঠি ও একটি ব্যাগ নিয়ে ওএমএসের চাল তোলার জন্য বসে আছেন। ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জয়পুরহাটের পৌরসভা রাস্তায় পাশে ক্ষুব্ধ হয়ে বসে আছেন।
তিনি বলেন, ‘পারুলিয়া গ্রাম থেকে এসেছি ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন আর দাঁড়তে পারছি না তাই লাঠিতে ভর দিয়ে বসে আছি। কখন চাল পাব বলতে পারছি না। আমাদের এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে।‘
শান্তিনগরের বাসিন্দা আনোয়ারা বলেন, ‘ফজরের নামাজের আগেই এসে দেখি মানুষ ব্যাগ নিয়ে লাইন ধরে আছে। ফজর থেকে বেলা ১১টা বেজে গেল এখনো মানুষের লাইন শেষ হলো না। কখন যে চাল পাব তা বলতে পারছি না। এ দিকে বাড়িতে ছোট্ট ছেলে ও মেয়েদের রেখে এসেছি। তারা কী খেল না খেল কিছু বলতে পারছি না। যদি চাল পাই তাহলে সে চাল নিয়ে বাড়িতে যাব তারপর রান্না করে সন্তানদের খেতে দেব। আমরা গরিব মানুষ কষ্ট করার জন্য তো পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি।’
নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা ফজলু হক (৬০) বলেন, ‘জেলা সদর নূরপুর গ্রাম থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে সকাল ৭টায় আসছি। দুপুর ১২টা বাজে এখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি আটার জন্য। আমি ডায়াবেটিসের রোগী। আমাকে রুটি খেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু আটা এখনো তো পেলাম না। বেশ কয়েকদিন এসে আটা পাইনি।’
ধানমন্ডি মহল্লার বাসিন্দা মহিদুল বলেন, ‘লাইনে আমার সামনে ৩০ থেকে ৪০ জন। ৯টায় ওএমএসের ডিলার মাসুদ রানা পল্লবের লোকেরা চাল ও আটা নিয়ে এসে দোকান খুললেন তখন থেকে বসে আছি। এখন চাল না পেয়ে চলে যাচ্ছি।’
পৌরসভা রোডের ডিলার মাসুদ রানা পল্লব বলেন, আজকে ৪০০ জনের কাছে ১ টন চাল-আটা বিক্রি করেছি। তবে অনেকে চাল-আটা না পাওয়ার কারণ বর্তমানে একজন ডিলার সর্বোচ্চ দেড় টন চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ পান। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ওএমএস চাল বিক্রি করার ক্ষেত্রে ডিলারদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএন