সিংড়ায় বড়ি তৈরি করে সফল ১০ পরিবার
শীতকালীন সবজি দিয়ে মাছের ঝোল সঙ্গে কুমড়াবড়ি বা মাসকলাই ডালের বড়ি- এটি পছন্দ করে না এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। তবে এখন শুধু শীতকালের মধ্যেই আর সীমাবদ্ধ নয়। সারা বছরই এ বড়ির চাহিদা বেড়েছে। আর এ বড়ি তৈরি করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার কলম পুন্ডরী গ্রামের ১০টি পরিবার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কলম পুন্ডরী গ্রামে বড়ি তৈরি করে শুকানোর জন্য সারি সারি রোদে দেওয়া। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এই কাজ করছেন। এটি তৈরির প্রধান উপকরণ অ্যাংকর ডাল, মাসকলাইয়ের ডাল, খেসারির ডাল এবং সামান্য মসলা দিয়ে বানানো হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি।
প্রথমে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ডাল পানিতে ভেজাতে হয়। এরপর মেশিনে গুঁড়ো করে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তারপর মিশ্রণে বড়ির উপকরণ তৈরি হয়। রৌদ্র উজ্জ্বল ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙিনায় খোলা জায়গায় ভোর থেকে তা তৈরির কাজ শুরু হয়। টিন বা পাতলা কাপড়ে সারি সারি করে মেলে এটি রোদে রাখা হয় শুকানোর জন্য। দুই থেকে তিন দিন টানা রোদে শুকাতে হয়। অতপর বিক্রির উপযোগী হয়।
কারিগররা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, এই বড়ি দিয়ে বোয়াল, বাইম, কৈ, শিং বা শোল মাছের ঝোল বেশ মুখরোচক ও জনপ্রিয়। এটি বানানোর উপযুক্ত সময় শীতকাল। তবে চাহিদা বাড়ায় এখন সারা বছরই তৈরি করা হচ্ছে। কলম পুন্ডরী গ্রামের নারীরা সারা
বছর ব্যস্ত বড়ি বানানোয়। বাড়ির আপন চাহিদা মিটিয়ে এটি হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
বড়ি তৈরির কারিগর পুন্ডরী গ্রামের রাশেদা বেগম বলেন, ১২ বছরের অভিজ্ঞতা আমার। মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। সেটি দিয়ে পরিবার ও নিজের চাহিদা মিটিয়ে থাকি।
তিনি আরও জানান, আমাদের দেখে এলাকার ১০ জন নারী এই কাজে এখন ব্যস্ত। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে তা বানানোর ধুম পড়ে যায়। এখানকার বড়ি সুস্বাদু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকায়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এগুলো সরবরাহ করা হয়।
বড়ির কারিগর আলামিন শাহ জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে এই কাজ করি। তাই আজও তা করে আসছি। বড়ি মূলত ডাল, মাসকলাই, চালকুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মৌরি দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি ১২০-১৫০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়তই পাইকাররা এসে আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায়। এ ছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন হাটেও খুচরা বিক্রয় করা হয় এই পণ্য।
বগুড়া জেলা থেকে বড়ি কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী মিলটন আলী। তিনি বলেন, এখানকার বড়ি যেমন নরম, তেমনি খেতেও বেশ ভালো লাগে। একবার যে এটি খায়, পরেরবার আবার খুঁজে কিনে নিয়ে যায়। আমার কিছু নিজস্ব খদ্দের আছেন, যাদের প্রধান পছন্দ এখানকার বড়ি। অন্য বড়ি কম দামে পাওয়া গেলেও নিতে চান না গ্রাহকরা। তাই বাধ্য হয়ে তাদের জন্য এখান থেকেই নিয়ে যাই।
এসএন