ভাতে বিষ মিশিয়ে স্বামীকে হত্যা চেষ্টা, স্ত্রী গ্রেপ্তার
বিয়ের বয়স প্রায় ৪-৫ বছর। স্বামী দিনমজুর। তার পরও প্রায় এক বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তাদের ভালোই কাটছিল দিন। হঠাৎ পাশের বাড়িতে কাজে আসে নিজ গ্রামের(জন্মস্থান) এক যুবক। পরিচয় থেকে এক পর্যায়ে তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ওই গৃহবধূ। প্রেমিক কাঠমিস্ত্রী। প্রায় এক থেকে দেড় মাসের প্রেমকে আরো মজবুত করতে উভয়ে সিদ্ধান্ত নেন সংসার গড়ার। কিন্তু তাতে পথের কাঁটা মনে হয় স্বামী আর ওই অবুঝ শিশুকে। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন তারা ওই পথের কাঁটা দূর করে নিজেরা এক বন্ধনে মিলিত হবে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বামী কাজে যাওয়ার আগে তার ভাতে বিষ মেশায় ওই গৃহবধূ। স্বামী যাওয়ার পর সন্তানকে বিষ খাওয়াতে না পেরে তার উপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। ঘটনা প্রবাহে ওই স্বামী এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় করা হয়েছে স্ত্রীকে গ্রেপ্তার। খবর পেয়ে পলাতক ওই প্রেমিক। এ ঘটনাটি ঘটেছে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের দিয়ারপাড়া গ্রামে।
ভুক্তভোগী ওই স্বামীর নাম শান্ত মন্ডল। আর তার স্ত্রীর নাম উর্মি বেগম। উর্মির প্রেমিকের নাম সালাম। তার বাড়ি একই ইউনিয়নের মাঝদীঘা গ্রামে।
স্থানীয় গ্রাম প্রধান কুতুব উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি দুলাল সরকার ও সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে গ্রাম প্রধান কুতুব উদ্দিন জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালে কাজে যাওয়ার সময় শান্তর টিফিন ক্যারিয়ারে ভাত সাজিয়ে দেন উর্মি। এ সময় সামান্য ভাত দিয়ে তার উপর ছিটিয়ে দেয় ফসলের জমিতে পোকা নিধনে ব্যবহার করা সাদা পাওডার বিষ। এর উপর আবারও ভাত দিয়ে আবারো ওই পাওডার বিষ দেয়। তার উপর আবারো ভাত দিয়ে ওই ক্যারিয়ার সাজিয়ে দেয়। দুপুরে কাজ শেষে সঙ্গীদের সঙ্গে খেতে বসে দুইবার শরীর খারাপ লাগে তার। এ বিষয়টি সঙ্গীদের বললে তারা ওই ভাতে পাওডার দেখতে পায়। আর আঙ্গুলে তিতা স্বাদ পেয়ে তারা ওই ভাত খেতে তাকে নিষেধ করেন। ধীরে ধীরে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তাকে ওই ভাতসহ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়৷
এ বিষয়টি খুলে বলার পর তার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকলে তাকে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে (রামেক) ভর্তির পর স্ত্রী উর্মিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে এলাকাবাসী। এক পর্যায়ে উর্মি সকল বিবরণ দেয়।
কুতুব আরো জানান, ওই অবুঝ শিশুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন তারা। খবর পেয়ে পুলিশ উর্মিকে থানায় নিয়ে যায়।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি দুলাল সরকার জানান, ভুক্তভোগীর রামেকে চিকিৎসা চলছে। তবে ৭২ ঘণ্টা পার না হলে তাকে শঙ্কামুক্ত বলছেন না ডাক্তার। এদিকে তাকে চিকিৎসা করানোর সামর্থও পরিবারের কারো নেই। বুধবার (১২ অক্টোবার) গ্রাম ও এলাকাবাসী টাকা তুলে তার চিকিৎসার খরচ বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকেই ওই প্রেমিক নিজ বাড়িতে তালা দিয়ে উধাও হয়েছে।
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ জানান, ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় উর্মিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বুধবার উর্মিকে কোর্টে চালান দেওয়া হবে।
এসআইএইচ