১৫ বিঘা জমির আমন ক্ষেত পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় জমির আমন ক্ষেতে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে ওই জমির ১৪ জন বর্গাদারের ১৫ বিঘা জমির আমন ধান পুড়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নে নেহেন্দা মৌজায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই জমির মালিক খালেকুজ্জামান তোতা। তিনি চন্দননগর গ্রামের বাসিন্দা ও একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, ১৯৬১ সাল থেকে ক্রয় সূত্রে নেহেন্দা মৌজায় ৪ দশমিক ৭৪ একর জমি চন্দননগর গ্রামের বাসিন্দা খালেকুজ্জামান তোতা ভোগদখল করে আসছিলেন। তার ওই জমি স্থানীয় বিভিন্ন কৃষক বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতেন। এদিকে চন্দননগর ইউনিয়নের নটিপুকুর গ্রামের মৃত সেখাতুল্লার ছেলে আব্দুস সামাদ গং ওই জমি নিজের দাবি করে আরএস খতিয়ান সংশোধনের জন্য ২০২১ সালে নওগাঁ তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। এরপর থেকেই আব্দুস সামাদ গংরা ওই জমি চাষাবাদের জন্য ভোগদখল নেওয়ার চেষ্টা করছিল। চলতি আমন মৌসুমে বর্গাদাররা জমিতে ধান রোপন করলে জমি থেকে ধান উঠাতে দিবে না বলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল বলে অভিযাগ করেন খালেকুজ্জামান তোতা। ওই জমির কিছু অংশে ধান বেরিয়েছে এবং আরো কিছু অংশে বেরোনোর অপেক্ষায়। আগামী এক মাস পর সব ধান ঘরে উঠার কথা ছিল।
রবিবার (৯ অক্টোবর) বিকালে সব ধান রৌদে চকচক করছে-ফোনে এমন খবর পেয়ে ধান ক্ষেতে যান খালেকুজ্জামান। আগাছা দমন বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করায় ধানের এমন অবস্থা হয়েছে। এরপর ওই দিন বিকাল থেকে সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বিঘা জমির অর্ধেক বেরোনো ধান পুড়ে চিটায় পরিণত হয়। এতে ওই জমির ১৪ জন বর্গাদারের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
ওই জমির মালিক খালেকুজ্জামান তোতা বলেন, ১৯৬১ সালে ১৩ জুন পূর্নচদ্র সাহার নিকট থেকে চার দশমিক ৭৪ একর জমি আমার বাবা মৃত খবির উদ্দিন আহম্মেদ ক্রয় করে আমার এবং ছোট ভাই হারুন অর রশিদের নামে লিখে দেন। ছোট ভাই মারা যাওয়ায় সব সম্পত্তির মালিক আমি। গত কয়েক বছর থেকে ওই জমি নিজেদের দাবি করে নটিপুকুর গ্রামের আব্দুস সামাদ গংরা বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার সঙ্গে সঙ্গে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। গত শনিবার রাতের কোনো এক সময় আব্দুস সামাদ গংরা ওই জমিতে থাকা আমন ক্ষেতে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এতে তার বর্গাদার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্গাদাররা সকলে দরিদ্র শ্রেণির। তারা অনেক কষ্ট করে চাষাবাদ করে আসছিল। এতে করে চন্দননগর গ্রামের বর্গচাষী আব্দুল হাই, নটিপুকুর গ্রামের বর্গাচাষী আশরাফ আলী, একরামুল, মকছেদ আলী ও আল মামুনসহ আরো ১৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নটিপুকুর গ্রামের অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ বলেন, কে কখন কিভাবে কীটনাশক স্প্রে করেছে তার দায় আমার উপর চাপালে তা হবে না। সেটা প্রমাণ করতে হবে। ওই জমি এক সময় আমাদের দখলে ছিল। খালেকুজ্জামান তোতা এখন জোর করে ওই জমি দখলে রেখেছে। তবে কীটনাশক স্প্রে করে ফসলের ক্ষতি করার অভিযোগটি অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে নটিপুকুর গ্রামের বর্গাচাষী বিধবা হাছনা বানু বলেন, গত তিন বছর থেকে খালেকুজ্জামান তোতার এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করে আসছি। আর এক মাস পর ধান ঘরে উঠার কথা ছিল। এখন সবগুলা ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু খড় হবে। জমিতে আবাদ করতে প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছ। সার ও কীটনাশকের টাকা এখনও দোকানে বাঁকী আছে। ছেলে ঢাকায় রিকশা চালায় তার টাকা দিয়ে আবাদ করা হয়েছিল। আবাদের পর অর্ধেক ধান জমির মালিককে দিয়ে বাঁকী অর্ধেক ধান সারা বছর খাওয়ার জন্য রাখা হতো। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
এ ব্যাপারে চন্দননগর ইউনিয়নের চন্দননগর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ওই জমিতে আগাছানাশক বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে জমির মালিক খালেকুজ্জামান তোতা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআইএইচ