তৃতীয় দিনেও নিখোঁজদের সন্ধানে আউলিয়া ঘাটে স্বজনরা
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় তৃতীয় দিনেও ভাই, মা, চাচা, পাড়া প্রতিবেশীদের সন্ধানে অপেক্ষার প্রহন গুনছেন স্বজনরা। নৌকাডুবিতে গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার ভোর ৫টার সময় ফের লাশ উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
মাড়েয়া ইউনিয়নের বটতালা এলাকার সিন্টু বর্মনের (২৬) লাশের জন্য ভোর ৫টা থেকে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে অপেক্ষা করছেন বোন জামাই জীবন বর্মন (৪০)। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গত রবিবার দুপুরে আমার শ্যালক সিন্টু মহালয়া উপলক্ষে ধর্মসভায় যোগ দিবেন বলে বদেশ্বরী মন্দিরে নৌকায় চরেন। মাঝপথে যাওয়ার পর নৌকাটি গভীর পানিতে তলিয়ে যায়। এতে অনেকের লাশ উদ্ধার করা হলেও আমার শ্যালকের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তার বউ আর ১০ মাসের শিশু কন্যা আছে। মেয়েটি তার বাবার জন্য কান্না করছে।
অপরদিকে হরিকিশোর (৫০), তার স্ত্রী , শশুর, শ্যালিকা, বোন পারুল বালা (৪০)'র লাশের অপেক্ষায় ঘাটে বসে আছেন প্রতিবেশী অনুকুল চন্দ্র রায় (৪৪)।
তিনি বলেন, রবিবার দুপুরে আমার ৫ জন প্রতিবেশী বদেশ্বরী মন্দিরে নৌকায় করে যাওয়ার সময় পানিতে ডুবে যায়। ঘটনার দিন থেকেই তারা নিখোঁজ। আজ সকালে হরিকিশোরের লাশ পাওয়া যায়। বাকিদের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
এদিকে লাশের খোঁজ করতে মাড়েয়া বামন হাট ইউনিয়ন পরিষদের হেল্প ক্যাম্পে ভিড় করছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। উদ্ধার হওয়া লাশের ছবি টানানো হয়েছে ক্যাম্পে। ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করে উদ্ধার হওয়া জায়গায় ছুটছেন তারা।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীপংকর রায় জানান, মূলত নারী এবং শিশুরা সাঁতার না জানার কারণে তারা তৎক্ষণাৎ ডুবে যায়। পুরুষদের মধ্যে বেশিরভাগই সাঁতার কেটে নিরাপদে চলে আসে।
তিনি আরো জানান , এখন পর্যন্ত ৫৫টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়া শেষ একজন উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলতে থাকবে।
এদিকে নিহতদের প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১ লাখ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার এবং জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে ।
এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গতকাল সোমবার রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাঁ এক আসনের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন, দিনাজপুর এক আসনের সাংসদ মনোরঞ্জনশীল গোপাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তারা নিহতদের বাসায় গিয়ে স্বজনদের সাথে দেখা করে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেন।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার দুপুর আড়াইটার সময় মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় রাতেই পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীপংকর রায়কে প্রধান করে একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসআইএইচ