প্রশ্ন একটাই, একসঙ্গে এতো জন উঠলো প্রশাসন কি করল?
গত চব্বিশ ঘন্টায় ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ডুবুরির দল, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়রা। তবে স্থানীয়দের মুখে একটিই প্রশ্ন আউলিয়ার ঘাটে গ্রাম পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সামনেই এতো লোক নৌকায় উঠলো আর তারা বাধাও দিলো না। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর কুমার রায় নিশ্চিত করে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, গত চব্বিশ ঘন্টায় করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট, খানসামা, দিনাজপুর, বীরগঞ্জের করতোয়া নদী থেকে ৪৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
অন্যদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনের লোক থাকার পরেও কেন তারা মাঝিকে বাধা দিলো না। গতকাল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও গ্রামপুলিশ সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলে আজ এতো প্রাণহানী হতো না। এদিকে গতকালকের নৌকাডুবির ঘটনায় কোন গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর কুমার রায় কে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মহালয়ার ধর্মসভায় যোগ দেওয়ার জন্য গতকাল দুপুরে রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বদেশ্বরী মন্দিরে নৌকায় করে রওনা হন দেবীগঞ্জ উপজেলার বেশকয়েকটি সনাতন ধর্মালম্বী পরিবার। কিন্তু সেই উৎসবের ক্ষণে দেখা দিলো বিষাদের ছায়া।ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত লোক ওঠায় নৌকাটি পানিতে ডুবে ৪৮ জনের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক নিখোঁজ হয়। মৃত্যু ও নিখোঁযে এখন পরিবারে পরিবারে শোকের মাতল।তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
স্ত্রী ও দুই নাতনীকে হারিয়ে হেমন্ত রায় পাগলপ্রায় তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে জানায়, গতকাল রবিবার দুপুরে আমার স্ত্রী, তিন মেয়ে, দুই নাতনী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, কন্যা মহালয়া উপলক্ষে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে ধর্মসভায় যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে করতোয়া নদী নৌকায় করে পার হওয়ার সময় নৌকাটি পানিতে ডুবে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের প্রাণহানী হয়েছে৷
এলাকাবাসী জানায়, ওই নদীতে কোনো সেতু না থাকায় গতকাল দুপুরের দিকে ধর্মসভায় যোগ দিতে শতাধিক যাত্রী একটি মাত্র নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলো। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায় অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়।
আজ সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৭টা ১০ মিনিট পর্যন্ত নিখোঁজদের অপেক্ষায় স্বজনদের নদীর পাড়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।নিহতদের মধ্যে শিশু ১৩, পুরুষ ১২ ও ২৩ জন নারী রয়েছেন। অপর দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে জানান, পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নদীতে বেশি পানি ও নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কারণে এত বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আজও ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা উদ্ধারে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৪৮ জনের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে।
এএজেড