পকেট নেবুলাইজার তৈরি করে সফল সিংড়ার রাকেশ
নাটোরের সিংড়ায় পকেট লেবুলাইজার তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন তরুণ উদ্ভাবক রাকেশ সাহা । রাকেশ সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে সে। এ বছর ৪৩তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় অংশগ্রহণ করে সিংড়া উপজেলা থেকে প্রথম স্থান, নাটোর জেলা থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে তরুণ রাকেশ। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অংশগ্রহণ করে সিংড়া উপজেলা থেকে "সেরা মেধাবী" শিক্ষার্থীর মর্যাদা লাভ করে এই স্কুল পড়ুয়া ছাত্র।
এ বিষয়ে রাকেশ সাহা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কিছুদিন হলো কোন প্রতিযোগিতা না থাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু প্রজেক্ট তৈরির চিন্তা ভাবনা করলাম। এরপর আমার মাথায় এলো নেবুলাইজার মেশিনের কথা। করোনার সময় থেকে দেখা যাচ্ছে অনেক মানুষ শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে নেওয়ার মতো সময়ও তাদের হচ্ছে না। ফলে শ্বাসকষ্টের রোগীরা ব্যক্তিগতভাবে নেবুলাইজার মেশিন কিনতে চাচ্ছেন এবং অনেকে কিনছেনও। তবে নেবুলাইজার মেশিনগুলো আমাদের দেশে ব্যবহার হয় সেগুলো আমাদের দেশে তৈরি নয়। বরং এসব নেবুলাইজার মেশিন চায়না থেকে আমাদের দেশে আমদানি করতে হয়। তাই এসব নেবুলাইজার মেশিনের দাম প্রত্যেকটি ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। যা অনেক ব্যয়বহুল। তাই সবার সামর্থ্যও হয় না একটা নেবুলাইজার মেশিন ব্যক্তিগতভাবে কেনার। তাই আমি এই বিষয়টি নিয়ে দুইদিন যাবত রিসার্চ করলাম। গুগল ইউটিউব সব জায়গায় আমি এসব তথ্য খুঁজতে লাগলাম। কেউ কি সব থেকে ছোট নেবুলাইজার মেশিন বানিয়েছে? কেউ কি কম খরচে নেবুলাইজার মেশিন বানিয়েছে? গুগল, ইউটিইব, উইকিপিডিয়া এসব জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর যেসব তথ্য পেলাম তা দেখে আমি সত্যিই অনেক আনন্দিত হলাম। দেখলাম গত চার-পাঁচ বছরে এমন কোনো যন্ত্র কেউ আবিষ্কার করেননি। আর যেসব যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে তা খুব একটা সাশ্রয়ী নয় এবং খুব একটা ছোটও নয়। অন্তত আমাদের বাংলায় তো এমন কোনো যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি। যা হয়েছে তা আমাদের বাংলার বাইরের বিভিন্ন দেশে। তাই আমি সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমিই তৈরি করব পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট, পকেটে বহনযোগ্য এবং সাশ্রয়ী নেবুলাইজার মেশিন।
আমি সঙ্গে সঙ্গে তরুণ উদ্ভাবক জয় বড়ুয়া লাভলু দাদাকে বিষয়টা জানালাম। দাদা আমাকে অনুপ্রেরণা এবং সাহস দিলেন। আমি কাজ শুরু করে দিলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো সাত দিনের মধ্যে পেয়ে গেলাম। কাজ শুরু করলাম একটা নেবুলাইজার মেশিন তৈরির। মাত্র তিন দিনের ভেতর আমার কাঙ্খিত যন্ত্রটি আবিষ্কারে আমি সক্ষম হলাম।
তিনি আরো বলেন, আমার স্কুলের ফেরদৌস স্যারের সহযোগিতায় নেবুলাইজার মেশিনে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ করলাম। স্যার আমাকে দুইটা ওষুধের নাম লিখে দিলেন। আমি ওষুধগুলো নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে কিনে আনলাম। ওষুধগুলো আমার তৈরি পকেট নেবুলাইজার মেশিনে দিলাম। এরপর আমি এটি নিজেই ব্যবহার করে দেখলাম। আমি নিজেই একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। গত কয়েক বছর যাবত এটার জন্য আমি কলকাতায় চিকিৎসা করছি। আমাকে ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। আমার ইনহেলারটা শেষ হয়ে যাওয়ায় এটি ব্যবহার করে আমি খুব ভালো ফল পাচ্ছি।
রাকেশ বলেন, আমার তৈরি এই ছোট মিনি পকেট নেবুলাইজারটি বেশ কাজে দিচ্ছে। বড় বড় নেবুলাইজার মেশিনগুলো ব্যবহার করার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজন হয়। এসব মেশিন থেকে অনেক শব্দ সৃষ্টি হয়। আমার তৈরি এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি ছোট , দেখতে সুন্দর এবং পকেটে বহনযোগ্য। এমনকি এটি রিচার্জেবল হওয়ায় এটি ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের কোনো প্রয়োজন নেই। আমার তৈরি এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি বড় মেশিনের মতো শব্দ সৃষ্টি হয় না। এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি তৈরি করতে আমার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। ফলে এটি আমি অনেক কম খরচেই তৈরি করে সাধারণ মানুষের হাতে আমি পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, যেহেতু একটি পকেট নেবুলাইজার মেশিন কিনতে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাগছে। সেহেতু এটি অনেক সাশ্রয়ী হয়। দেশের সাধারণ জনগণ এটি কিনতে পারবে বলে আমি আশা করছি। এতে করে বাহিরের দেশ থেকে বড় বড় নেবুলাইজার মেশিনের আমদানি কমিয়ে আমাদের দেশীয় পণ্য তথা আমার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পকেট নেবুলাইজার মেশিন উৎপাদন করে এবং সাধারণ জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে পারলে আমাদের সাধারণ মানুষ গুলো অনেক উপকৃত হবে। এমনকি আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পকেট নেবুলাইজার মেশিনগুলো আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আমদানি করে আমাদের দেশ অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারবে বলে আমি আশা করছি।
এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপির সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই তরুণ উদ্ভাবক।
এসআইএইচ