অভিনন্দন জানাতে সাবিনার বাড়িতে কোচ আকবরের স্ত্রী
হিমালয়ের দেশ নেপালকে পরাজিত করে সাফে নারী চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলার বাঘিনীরা। দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নিজ জেলা সাতক্ষীরায় বইছে আনন্দের জোয়ার। ফুটবলপ্রেমী ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন সাবিনাসহ তার পরিবার। ঢাকার মতো করে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ছাদ খোলা গাড়িতেই সাবিনাকে বরণ করে নিয়েছে সাতক্ষীরাবাসী।
এর আগে সাবিনার আগমনের খবরে ফুটবল প্রেমী মানুষ ভিড় জমাতে থাকে সাতক্ষীরা শহরের সবুজবাগ এলাকায় অবস্থিত সাবিনাদের বাড়িতে। এদিন সাবিনাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সাবিনাদের বাড়ির ছোট্ট ড্রয়িং রুমটা সাবিনারই দখলে। নানা অর্জনের স্মারক আর ছবিতে সাজানো পুরো রুমটা। সেখানে সাবিনার ৫০, ১০০ আর ২৫০ গোল করার বাঁধানো স্মারক জার্সি। শোকেস ভরা বিভিন্ন ধরনের অভিনন্দনবার্তার স্মারকসহ বিভিন্ন গুণীজন ও সাবিনার ছবি শোভা পাচ্ছে ড্রয়িং রুমের দেয়ালে।
ড্রয়িংরুমের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ঠিক এক কোণে মুঠোফোনের দিকে চেয়ে নীরবে কী যেন ঘেঁটে ঘেঁটে দেখছেন মধ্যবয়সী এক নারী। আর বারবার অশ্রু মুছে চলেছেন তিনি।
এসময় অশ্রুসিক্ত ওই নারীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশের সাংবাদিকের। তিনি ঢাকাপ্রকাশের সাংবাদিককে জানান, যার কারণে সাবিনা আজ নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন, তিনি সেই তৃণমূলের কোচ আকবর আলীর সহধর্মিনী রেহেনা খাতুন।
স্বামীর স্মৃতিচারণ করে সাবিনা খাতুনকে নিয়ে তিনি বলেন, তৃণমূলের ফুটবলের জন্য নিভৃতে কাজ করে গেছেন তার স্বামী আকবর আলী। তৃণমূলের নিঃস্বার্থ একজন কোচ ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের স্ট্রাইকার সাবিনা খাতুনকে হাতে ধরে গড়ে তুলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, সাবিনা খাতুনসহ অসংখ্য মেয়েদের নিজের আগ্রহে ফুটবল মাঠে নিয়ে যেতেন আকবর আলী। নিজের বাড়িতে রেখে নিয়মিত অনুশীলন করাতেন সবাইকে। শুধু খেলা নয়, পড়াশোনার খরচও মেটাতেন কোনো কোনো খেলোয়াড়দের।
রেহেনা খাতুন জানান, ফুটবলার সাবিনাই নয়, দেশের ফুটবলের প্রথম পেশাদার নারী কোচ ও সাবেক ফুটবলার মিরোনা খাতুন, জাতীয় দলের ফুটবলার সুরাইয়া খাতুন, মাসুরা পারভীনদেরও কোচ ছিলেন আকবর আলী। জাতীয় কাবাডি দলে খেলা একাধিক নারী খেলোয়াড় আকবর আলীর হাতে তৈরি। দেশের সাবেক দ্রুততম মানবী শিরিন এবং নিজের যমজ মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও ফাতেমা তুজ জোহরাও ছিলেন আকবর আলীর হাতে গড়া।
এসময় সাফ চাম্পিয়নশিপের শিরোপা অর্জন ও সাবিনার ব্যক্তিগত সাফল্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি বলেন, এবারের সাফ চাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টের কয়েক মাস আগে স্বামী আকবর আলী মারা যান। ওইসময় আকবরের তৃণমূলের সেরা কোচের পুরস্কারটা সাবিনা গ্রহণ করে আমাদের বাসায় পৌঁছে দেন। এরপর থেকে সাবিনার সঙ্গে কথা হলেও আর দেখা হয়নি। শুধু সাবিনার কারণে যশোর থেকে অনেক কষ্ট করে সাতক্ষীরা এসেছি।
তিনি বলেন, আকবরকে কখনো সাবিনা স্যার বলতেন না। বড় ভাই বলে ডাকতেন। একজন অভিভাবক হিসেবে মানতেন। আজকে আকবর বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন- বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এসএন