ইলিশা ফেরিঘাটের বড় আপদ ইউসুফ-আজিজের চাঁদাবাজি
ইউসুফ পাটোয়ারি ও আজিজের চাঁদাবাজি বড় আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের পরিবহন চালকদের জন্য। তাদের চাঁদাবাজিতেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ইলিশা ফেরিঘাট। আর এ চাঁদাবাজি কিছুতেই থামছে না। তাই এটি একটি অপ্রতিরোধ্য বিষয় বলেও দাবি তুলছেন ফেরি পারাপারের জন্য ঘাটে আসা যানবাহন চালকরা।
জানা গেছে, ইউসুফ পাটোয়ারি বিজেপির সাবেক নেতা এবং নব্য ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্পাদক।
ভুক্তভোগী ড্রাইভারদের অভিযোগ, ইউসুফ ও আজিজের নির্দিষ্ট পরিমাণ চাহিদা পূরণ না করলে ফেরিতে গাড়ি উঠতে দেওয়া হয় না। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ফেরিঘাটে আসা যানবাহন চালকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।
ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে আশা ট্রাকচালকরা জানান, ইউসুফ পাটোয়ারির চাঁদার আতঙ্কে আমরা অতিষ্ঠ। তবে চালকরা প্রশংসা করেন সাবেক মন্ত্রী আলহাজ্ব তোফায়েল আহাম্মেদের । তারা বলেন, জাতীয় নেতা তোফায়েল আহাম্মেদের সুনাম বিনষ্ট করার জন্য ইলিশা ঘাটে এ রকম ধান্দার কাউন্টার বসান বিজেপির সাবেক নেতা ইউসুফ পাটোয়ারি ও আজিজ ।
ড্রাইভাররা জানান, গত দুই বছর আগে তোফায়েল আহাম্মেদের নির্দেশে ইলিশাঘাট থেকে এক চাঁদাবাজকে আটকের পরে কিছুদিন আমরা স্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ার পরে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইউসুফসহ তার সহযোগীরা।
চাঁদাবাজরা নিজেদের স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছে বলেও জানান ভুক্তভোগী একাধিক চালক ও হেলপাররা। জানা গেছে, চাঁদা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে এ ঘাটে।
আরও জানা গেছে, ইলিশা ঘাটে পন্যবাহী ট্রাক আসলেই লাইন খরচের টাকার নাম করে হাত বাড়ায় ইউসুফ পাটোয়ারি। তবে মাছ বহনকারী গাড়ি হলে এক লাফে চাঁদার পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে একাধিকবার অভিযুক্তদের প্রতি ব্যবস্থা নিলেও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি, বেপরোয়া রয়েই গেছে ইউসুফ গংরা। এখানকার ফেরির উদ্দেশে আসা সকল যানবাহনকেই অপেক্ষা করা থেকে সব ধাপেই সংশ্লিষ্টদের চাহিদা পূরণ করতে হয় চালকদের। প্রশাসন বিভিন্ন সময় এর প্রতিকার নিলেও চাঁদাবাজি থামছে না কিছুতেই। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পরে আবারও চাঁদাবাজি শুরু হয় নতুন কৌশলে। ধাপে ধাপে শুধু কৌশল পরিবর্তন হয় কিন্তু চাঁদামুক্ত হয় না।
এই ফেরিঘাটে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা। তারপরও থামানো যায়নি ইউসুফদের চাঁদাবাজি। তাদের চাঁদাবাজির বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপ সংরক্ষিত রয়েছে প্রতিবেদকের হাতে। তবে সিসি ক্যামেরার সুফল না পাওয়ার কথাও ব্যক্ত করেন চালকরা। এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইউসুফ পাটোয়ারি তার সহযোগীকে আদেশ দিচ্ছে রেডেক্স থেকে ৪০০ টাকা লও এক পয়সাও কম হবে না । আবার সোনার বাংলার আরেক চালককে বলছেন ওর কাছে টাকা দেন সমস্যা নাই । ইউসুফ নিজেও চাঁদা আদায় করছে এমন বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপও রয়েছে। তাতে প্রমাণ হয় যে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারে ঠেকানো যায়নি এ ঘাটের চাঁদার ধান্দা।
এদিকে ঘাটে চাঁদাবাজির ধরনেও ছোঁয়া লেগেছে নানা আধুনিকতার, পাল্টে গেছে চাঁদার পরিমাণ ও স্টাইল। প্রশাসনের লোক কিংবা সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেলেই নতুনরা তুলেন নির্ধারিত পরিমাণের টাকা।
ইলিশা ফেরিঘাটের অপেক্ষমান ট্রাক চালকরা বলেন, পরিবহন সেক্টরে বিস্তর চাঁদাবাজি। পরিবহন সেক্টরের এই চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য থামানোর সাধ্য যেন কারোই নেই।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন চালক বলেন, সাবেক বিজেপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা ইউসুফ এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের সঙ্গে মিশে এই চাঁদা কালেকশন করেন। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলেন, আমি পুল্টনের টোল ইজারাদার । কিন্তু পুল্টনের টোল আদায়ের ৭৫ টাকা আদায় রশিদের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিসির ফেরি ভাড়া আদায়ের সঙ্গেই নেওয়া হয় এমনটাই দেখা গেছে সরেজমিনে। তাহলে ইউসুফ পাটোয়ারি লাইনের দোহাই ও পার্কিং দোহাই দিয়ে যে টাকা নেন তা চাঁদা নয় কি? এমন প্রশ্ন চালকদের কিন্তু ইলিশার প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়াই থাকা ইউসুফ কে থামাবে কে?
চালকরা জানান, চাঁদাবাজ ইউসুফের পক্ষে স্থানীয় নেতা ও ঘাট ইজারাদারের অসাধু কর্তাব্যাক্তি অবস্থান নেওয়ায় প্রশাসনের সব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে । এ পয়েন্টের চাঁদাবাজি এখন অপ্রতিরোধ্য বিষয়ে রূপ নিয়েছে।
চালকরা বলেন, জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বেড়েছে এখানকার চাঁদার হার । দেশের পূর্ব-দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহের একটি প্রবেশদ্বার ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি। এ রুটে চলাচলরত দুই সহস্রাধিক যানবাহন থেকে চলছে ইউসুফদের আদায় বানিজ্য ।
ইউসুফের টাকা কালেকশনের বিষয়ে ঘাট ইজারাদার হোসেন সহিদ সোহরাওয়ার্দী মাষ্টার বলেন, আসলে আমাদের মাসে ৪ লাখ টাকা কালেকশন দরকার। পদ্মা সেতু হওয়াতে কালেকশন কম হচ্ছে ।
তিনি আরও বলেন, গাড়ি প্রতি আদায়কৃত টাকা আমি একা পাই না। বিষয়টি পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসি ওদের দিয়ে কালেকশন করে আমাদেরকে একটি অংশ দেয় ।
তবে বিআইডব্লিউটিসি’র টোল ইজারার বাহিরে ইউসুফ রশিদ ছাড়া যে টাকা তুলেন সেই বিষয়টি কিভাবে দেখছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা তা নিশ্চিত নয় যানবাহন চালকরা। এ বিষয়ে জানতে ভোলা বিআইডব্লিউটিসির ইনচার্জ পারভেজ আহাম্মদের ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ইলিশা ফেরিঘাটে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে ভোলা সদর সার্কেলের এএসপি মো. ফরহাদ সরদার বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি জেনেছি । এখানে চাঁদা আদায়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
এসআইএইচ