ভুলের কারণ জানতে চাওয়ায় সাংবাদিকের উপর হামলার অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ট্রমা জেনারেল হাসপাতালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জাতীয় দৈনিক মতপ্রকাশের জেলা প্রতিনিধি ও স্থানীয় নিউজ পোর্টাল স্বাধিকার নিউজ.কমের সম্পাদক সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে রেখে হামলা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় অন্যান্য সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে । এ ঘটনায় সিভিল সার্জন বরাবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডাঃ মোঃ ফয়সাল আল-আহসানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সেই সাংবাদিক ও রোগীর স্বজনরা। তা ছাড়াও সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়রিও করেছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ডা. মো. ফয়সাল আল-আহসান সদর হাসপাতালের বাইরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ট্রমা জেনারেল হাসপাতালসহ আশুগঞ্জে নিজের মালিকানাধীন লাভিটা হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করেন। সিনিয়র ডাক্তারদের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কিডনি জনিত সমস্যার রোগী তুহিন আহমেদের গলায় পেস্টুলা করতে গিয়ে ভুল করেন ডা. মো. ফয়সাল আল-আহসান। এই ভুলে রোগীর অবস্থা আরো অবনতি হয়। রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না পেয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ডাক্তারের অনুমতিক্রমে এই বিষয়ে কথা বলতে সাংবাদিক তার চেম্বারে গেলে তিনি সাংবাদিকের করা প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পেরে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে রাখেন। পরে মোবাইল ফেরত চাইলে তিনি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন সাংবাদিক এবং রোগীর স্বজনকে মারধর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দিতে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী তুহিন আহমেদ জানান, আমি কিডনি জনিত রোগের সমস্যায় ভুগছি। গত দেড় মাস যাবত নিয়মিত ডায়ালাইসিজ করছি। ভারত এবং ঢাকা থেকে চিকিৎসা শেষে গত ৯ সেপ্টেম্বর ঘাটুরাস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিস্টুলা করতে যান। আমার ঘাড় নড়াচাড়া করতে পারি না বলে গলায় ফেস্টুলা করতে নিষেধ করেছিলেন ভারত ও ঢাকার ডাক্তাররা। এই বিষয়টি অবগত করেই হাসপাতালে ভর্তি হয়, ওটি রুমে প্রবেশের পর ডাক্তার ফয়সাল আহসান আমাকে বলে গলায় করতে। তখন আমি বলি অন্যান্য ডাক্তাররা তো গলায় করতে নিষেধ করেছে তখন তিনি নিজেকে বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে বলেন আমি বলছি ভালো হবে। এখন আমি বলেছি আপনি যদি মনে করেন ভালো হবে তবে করেন। তখন তিনি কাত করে শুইয়েই গলায় পিস্টুলা করেন। পিস্টুলা শেষে আমি বাড়ি ফেরার জন্য নিচে নামতে গেলেই গলা দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন ইমারজেন্সিতে গেলে তারা আমাকে আবার ওটিতে নিয়ে আধা ঘণ্টা প্রচেষ্টা করেও রক্তপাত বন্ধ করতে না পেরে গলায় লাগানো মেশিম খোলে ফেলে জায়গাটা ব্যান্ডেজ করে দেন এবং বলেন পরের বার টাকা কমিয়ে রাখবেন। তখন দরজায় দাড়াঁনো আমার আম্মা কারণ জানতে চাইলে তিনি তাকে ধমক দিয়ে দূরে সড়ে যেতে বলেন।
ভুক্তভোগীর ছোট ভাই তৌফিক জানান, ডাক্তারের নিষেধ থাকার পরও কেন তিনি গলায় পিস্টুলা করলেন এ বিষয়ে জানতে ডাঃ আবু সাঈদ কাকার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অপারেশন করা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন এবং কেন রক্তক্ষরণ হলো তা জানতে বলেন। পরে ডা. ফয়সাল আল-আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি দেখা করতে রাজি হোন নাই। তাই পরিচিত সাংবাদিক নিয়ে ট্রমা জেনারেল হাসপাতালে তার চেম্বারে দেখা করতে গেলে তার অনুমতি নিয়েই অন ক্যামেরায় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কোন উত্তর দিতে না পেরে রেকর্ড চলাকালীন সাংবাদিকের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেন। পরে হাসপাতালের লোকজনকে ডেকে এনে আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে বলেন।
তিনি আরও জানান, আমি এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, মোবাইল ফোনে ডাক্তারে অনুমতি নিয়ে তার চেম্বারে দেখা করতে যান। পরে তার অনুমতি নিয়ে অন রেকর্ড কথা বলা শুরু করলে তিনি এক সময় প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পেরে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নেন এবং আধা ঘন্টা আটকে রাখেন। পরে কালের কণ্ঠের সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবুকে ফোন দেন তিনি। তখন বিশ্বজিৎ পাল বাবু তাকে আমার মোবাইল ফিরিয়ে দিতে বলেন। তখন তিনি ট্রমা জেনারেল হাসপাতালের লোকজনকে ডেকে এনে আমাদের মারধর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দিতে বলেন। কিন্তু ততক্ষণে আমার পরিচিত সাংবাদিকসহ লোকজন চেম্বারের সামনে জড়ো হলে আর হাসপাতালের লোকজন আমার পরিচিত হওয়ায় তারা মোবাইল ফোন আমাকে ফিরিয়ে দেয় এবং চলে যেতে বলে। এরপর থেকে সরাসরি ও ফোন কলে ওই ডাক্তারের পরিচিত অনেক মানুষ ব্যাপারটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলেন। বাড়াবাড়ি করলে ডাক্তার আমার অপূরনীয় ক্ষতি করবেন বলেও জানান তারা। তাই বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে অবগত করি। উনার পরামর্শে সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি এবং সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। পরে খোঁজ নিতে জানতে পারি, আগেও রোগীকে থাপ্পড় মারাসহ এই ডাক্তারের ব্যাপারে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি কিন্তু ঘটনাটি সদর হাসপাতালের নয়। বাহিরে অন্য হাসপাতালের ঘটনা হওয়ায় ভুক্তভোগীদের সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ জানাতে বলেছি। তবে আমরাও ব্যাপারটা খতিয়ে দেখব।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, ভুক্তভোগী রোগী এবং সাংবাদিকের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এমরানুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ সাধারণ ডায়রি করেছেন। এ বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।