জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ, শঙ্কায় উপকূলের মানুষ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। জোয়ারের পানির তোড়ে জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) থেকে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকাল পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এদিন দেখা মেলেনি সূর্যের।
সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় জরাজীর্ণ এসব বেড়িবাঁধ নিয়ে চরম সংশয়ে রয়েছেন উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।
নিম্নচাপের প্রভাবে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, গলঘেষিয়া ও বেতনা নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে ২-৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপেক্ষাকৃত নিচু বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে রবিবার থেকে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজার চান্নীসহ প্রতাপনগরের কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।
অন্যদিকে সোমবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের দক্ষিণ গদাইপুর এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ওই এলাকার সহস্রাধিক মৎস্য ঘেরসহ একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যদি ওই বাঁধ সংস্কার করা সম্ভব না হয় তাহলে আশপাশের তিন ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের নির্দেশে সরকার দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা বাঁধ সংস্কারে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন।
শ্যামনগর উপজেলার রবিউল ইসলাম বলেন, উপকূলের মানুষদের দীর্ঘ দিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে দুর্যোগ আসলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর।
একই উপজেলার হরিনগর গ্রামের নির্মল রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে সেসব এলাকার মানুষের। ওইসব এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকদের বলার পরও তারা কোনো কাজ করেননি।
আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম বলেন, ইউনিয়নের কয়েকটি বেড়িবাঁধের পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে গদাইপুর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্য মাছের ঘের ভেসে গেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানোর পরও তারা কোনো প্রকার কাজ করেননি। উপকূলীয় এলাকা নদীবেষ্টিত। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়। সরকারি মহল থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় না। যে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে ইউনিয়নের মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে আতঙ্কে থাকি।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি উড়িষ্যা উপকূল ও বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। যার প্রভাবে আরও দুই-তিনদিন এ ধরনের বৈরী আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) আবুল খায়ের জানান, সাতক্ষীরা-১ ও সাতক্ষীরা-২ পোল্ডারের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩৫টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি প্রায় ৩ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে জোয়ারের পানির তোড়ে জেলার একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে বাঁধ সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
এসজি