‘ত্রাণ চাই না, স্থায়ী বাঁধ চাই’
ছারাতন বেগম (৪৮)। স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। ১৮ দিন আগে ধরলার তীব্র ভাঙনে তার বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখন ঠাঁই নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। স্বামীর দিনমজুরির টাকায় চলে সংসার। অনেকটা মানববেতর জীবনযাপন করছে ছারতান বেগমের পরিবার।
ছারাতন বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ধরলায় ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় আমার কোনো দুঃখ নেই। এখন অন্যের বাড়িতে ঠাঁই নিয়ে স্বামীসহ এক বোবা সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন অতিবাহিত করলেও ত্রাণসামগ্রী নিতে চান না তিনি। তিনি চান ধরলার ভাঙন ঠেকানো। হাজার হাজার মানুষের ফসলি জমিসহ তার এলাকার প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি তার ভাঙন এলাকাগুলোতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন রক্ষার্থে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক এলাকাবাসী দেড় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে। সেই মানবন্ধনে ছিলেন ছারাতন বেগমও।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চর গোরকমন্ডলের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন, সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান, স্থানীয় আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত দেড় থেকে দুই মাসে ওই এলাকায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়িসহ হাফ কিলোমিটার সড়ক ধরলায় বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে শতশত হেক্টর ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ভাঙন রক্ষা করতে না পারলে চর গোরকমন্ডল এলাকার প্রায় সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ পরিবারসহ একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মাদ্রাসা, চারটি মসজিদ, একটি সরকারি আবাসন প্রকল্পসহ বেশকিছু গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। বক্তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে রবিবার সকাল ১১টার দিকে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী, শিক্ষার্থী আব্দুস সালাম, সমাজসেবক সিদ্দিক হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী, নদীভাঙনের শিকার আব্দুল মালেক, নছিম উদ্দিন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ চলতি বছরে ৩৫০টি এবং গত ৩ বছরে ৬৮১টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এতে এক হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আবাসন প্রকল্পসহ ফসলি জমি, মাছের ঘের ও গরুর প্রকল্প। বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও আজ অবধি পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো সাড়া দেয়নি। এ কারণে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
এসজি