জরিমানার পর আরও বেপরোয়া আল নূর হাসপাতাল
১০ হাজার টাকা জরিমানার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের বিপরীতে কসাইখানা নামে পরিচিত অনিবন্ধিত আল নূর হাসপাতাল। গ্রামের কিছু দালালকে ম্যানেজ করে ইচ্ছামতো যেকোনো রোগী ভর্তি করছেন তারা। আর ঘটাচ্ছেন একের পর এক দুর্ঘটনা। বিশেষ করে কোনো গর্ভবতী মা সেখানে গেলে এখনই সিজার করতে হবে, না করলে বাচ্চা বাঁচবে না, মায়ের ক্ষতি হবে বলে অভিভাবক ও গর্ভবতী মায়েদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং সিজারিয়ান অপারেশন করতে বাধ্য করছেন। আর রোগীর অবস্থা খারাপ হলেই তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল বা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এদিকে জামায়াত-শিবির দ্বারা পরিচালিত আল নূর হাসপাতালের নিয়মিত কোনও ডাক্তার না থাকায় ওই রোগীদের চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ ও গর্ভবতী নারীদের সিজারিয়ান অপারেশন করছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এতে ক্লিনিক মালিক ও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা লাভবান হলেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তার স্বজনরা।
অপরদিকে স্বাস্থ্য দপ্তর অনিবন্ধিত ক্লিনিকগুলো বন্ধের জন্য বারবার নির্দেশনা দিলেও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসিনতার কারণে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে সদরের কুশখালী ইউনিয়নের বাঁশদহা/ ভাদড়া গ্রামের জিল্লুর রহমানের স্ত্রী রেশমা খাতুনের মাত্র ৩২ সপ্তাহে সিজারিয়ান অপারেশন হয় আল নূর হাসপাতালে (ওই অপারেশন করেন হাসপাতালে কর্মরত খন্ডকালিন চিকিৎসক ডা. সোমরানী)। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ওই গর্ভবতী নারী রেশমা খাতুনকে সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন ডা. জয়ন্ত সরকার।
সেখানে ওই গর্ভবতী নারীর পেট কেটে জমজ বাচ্চা বের করেন ডাক্তার। কিন্তু বাচ্চা জন্মের পূর্ণাঙ্গ সময়ের পূর্বে সিজারিয়ান অপারেশন করার কারণে জমজ বাচ্চার অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। তখন আল নূর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে ওই জমজ বাচ্চা দুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করে এবং পরিবারের সদস্যরা সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জমজ বাচ্চা দুটির মধ্যে ১টি বাচ্চা রাত ৯টার দিকে মারা যায়। অন্য বাচ্চাটির অবস্থাও আশঙ্কাজনক!
সদর হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে রেশমা খাতুনের জমজ বাচ্চা দুটিকে ভর্তি করা হয়। ওই সময়ে বাচ্চা দুটির ওজন ছিল ১৫০০ গ্রাম এবং বাচ্চার পর্যাপ্ত শ্বাসকষ্ট ছিল। পরবর্তীতে বাচ্চা দুটিকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। যার রেজিঃ নম্বর ৩৩/২৪৬, বেড নম্বর- ১১।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মমতাজ মজিদ জানান, রাত ৮ টার শিফটে ডিউটিতে যোগ দিয়েছি এবং রাত আনুমানিক ৯টার পূর্বে শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স জানান যে শিশু ওয়ার্ডে জমজ বাচ্চাদ্বয়ের মধ্যে একটি বাচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ। এর পরপরই শিশু ওয়ার্ডে ওই বাচ্চা দেখতে যাই। পরে রাত ৯টার দিকে বাচ্চাটি মারা যায়।
এ বিষয়ে আল নূর হাসপাতালের পার্টনার ও শিবির নেতা ফিরোজ সাহ বলেন, আপনারা শুধু আল নূল হাসপাতালকে দেখতে পান। অন্য হাসপাতাল আপনাদের চোখে পড়ে না। আর আপনারা কি জানেন ওই সিজারিয়ান অপারেশন কে করেছে? ওই সিজারিয়ান অপারেশন করেছে ডা. জয়ন্ত সরকার। আপনারা পারলে নিউজ করেন।
এ ব্যাপারে ডা. জয়ন্ত সরকার বলেন, আমি ওই সিজারিয়ান অপারেশন করিনি। ওই সিজারিয়ান অপারেশন করেছিলেন ডা. সোমাদি। তার কাছে শুনলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এসআইএইচ