নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা পাইয়ে দিতে ঘুষের অভিযোগ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষ। বন্যা মৌসুম ছাড়াও শীত-বর্ষাসহ সব ঋতুতেই চলমান থাকে ভাঙন। এতে করে প্রতিনিয়ত চরাঞ্চলের মানুষদের বসতভিটা ও ফসলি জমি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
চরাঞ্চলের অসংখ্য পরিবার ঘরবাড়ি ও বসতভিটা হারিয়ে অন্যের জমি, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় ও সড়কের ঢালে ছোট-ছোট টিনের ঘর বা ছাউনি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন।
উপজেলার গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় ও দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দ আসা ৫০ হাজার টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০ হাজার করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি সদস্য অর্জুনা ইউনিয়ন বাসুদেবকোল গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দিলশাদ ও সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নাছিমা বেগমের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ঘুষ নেওয়ার ঘটনায় বাসুদেকোল গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আরশেদ, আব্দুল কদ্দুস ও মাসুদ রানা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। দুই ইউপি সদস্যের ঘুষ নেওয়ার কাণ্ডে নানা মহলে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। অভিযোগের পর গত ২৮ আগস্ট স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব বাসুদেবকোল এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের উন্মুক্ত তালিকা প্রণয়নে আলোচনা সভা করেন। সভা চলাকালীন সময়ে ঘুষ দেওয়া ব্যক্তিরা টাকা ফেরত চেয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করেন।
ঘুষ দেওয়া একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, মেম্বার দিলশাদ ও নাছিমা জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার জন্য তালিকা হচ্ছে। এতে ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। আপনারা যদি সেই টাকা নিতে চান তাহলে ২০ হাজার করে টাকা দিতে হবে। না দিলে টাকা পাওয়া যাবে না। পরে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার আশায় ধারদেনা করে তাদের টাকা দিই।
জানা যায়, ২০১৯ সালে উপজেলার গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল চার ইউনিয়নে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ১ হাজার ৫০৩ জনের নামের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে গাবসারায় ৮৩১, অর্জুনায় ৪৮৮, গোবিন্দাসীতে ১১২ ও নিকরাইলে ৭২ জনের তালিকা করা হয়। সেই চাহিদা মতে ২০২১ সালে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ আসে। পরে তালিকার মধ্য থেকে ৩৩২ জন ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ আসে। এ খবরে ২০২২ সালের আগস্টে ওই দুই ইউপি সদস্য ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা ও না করার নামে ঘুষ নেন।
এ নিয়ে বেশ কিছু ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে ইউপি সদস্য দিলশাদ ও নাছিমা বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হলে ইউপি সদস্য দিলশাদ কয়েকদিন আগে স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় চেয়ারম্যানের উদ্যোগে উন্মুক্ত তালিকা প্রণয়নের বক্তব্য দিয়ে প্রতিবাদ করেন। ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন দিলশাদ ও নারী সদস্য নাছিমা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব বলেন, ইউপি সদস্য দিলশাদ ও নাছিমার বিরুদ্ধে সরকারিভাবে বরাদ্দ আসা আর্থিক সহায়তা পাইয়ে দিতে যে অভিযোগ আসে তার পরিপ্রেক্ষিতে উন্মুক্ত তালিকা প্রণয়নের আয়োজন করা হয়। তাদের বিষয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আমার পরিষদকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এসজি