কুড়িগ্রামে জাল সনদে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা
কুড়িগ্রামে বিভিন্ন উপজেলায় জাল সনদে দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। জাল সনদে চাকরির সত্যতা পেয়ে বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে জেলা শিক্ষা অফিস এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি বলে জানানো হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক নাসরিন সুলতানা কম্পিউটারের শিক্ষকতা শুরু করেন ২০০৯ সালে। এমপিওভুক্ত হন ২০১০ সালে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বেতন-ভাতা নিয়মিত তুলছেন। তবে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়াও উপজেলার কাশিপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক আসমা খাতুনেরও সনদটি জাল। তিনি ২০১৩ সালে যোগদান করলেও তার এমপিও হয়নি। গত বছর ২৪ জুন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) কুড়িগ্রামের স্মারক নম্বর-০৫.৪৭.৪৯০০.০১৫.০২.০১৪.২১-১৩৩।
ফুলবাড়ী উপজেলার ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনজন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ যাচাই করার জন্য পত্র দেওয়া হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় উক্ত শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদ সঠিক নয়। ফলে নিবন্ধন সনদটি জাল প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ০৫.৪৭.৪৯১৮.০০০.০২.০৬১.২১.৬৮ স্মারক নম্বর এ ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ওই শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দেওয়া হয়।
একই অবস্থা নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশি ইসলামিয়া আলিম মাদ্ররাসার শরীর চর্চার সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদের নামও জাল সনদভুক্ত তালিকায় রয়েছে। তিনি এমপিও ভুক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন পেয়ে আসছেন।
তদন্তে জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হবার পরও বহাল তবিয়তে আছেন জেলার অনেক শিক্ষক। জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে কোনো পত্র বা নির্দেশনা আসেনি।
এ ছাড়াও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৬ সালে সরকার ঘোষিত বাতিল করা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিয়ে এখনো চাকরি করে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। এই সনদে নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগার পদে হালিমা খাতুন চাকরি করছেন। তার সনদ অনুযায়ী ২০১৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়াও অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ২০২১ সালে ১০৫ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদের তালিকা প্রকাশ করে। যার স্মারক নম্বর-ডিআইএ/এনটিআরসিএ/ রাজশাহী/৯৭৭ তারিখ-২৯সেপ্টেম্বর ২০১৬। এই স্মারকে সহকারী পরিচালক (শিক্ষাতত্ব ও শিক্ষা মান) লোকমান হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় ৪, ৬ থেকে ২১,২৫,২৬; ২৮ থেকে ৩২; ৩৫ থেকে ৪২; ৪৪ থেকে ৬৪ এবং ৬৭ থেকে ১০৫ নম্বর তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা জাল সনদের আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাই সনদধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জেলার শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হলো।
শিক্ষক নাসরিন সুলতানা বলেন, আমি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২০০৮-০৯ সালে এই সনদ সংগ্রহ করেছি। কিন্তু এগুলো জাল নাকি সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এখন অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারছি সনদটি সঠিক নয়।
শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, তার সনদটি সঠিক। কীভাবে জাল সনদের তালিকায় নাম এসেছে সেটি তার জানা নেই।
তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করার কথা স্বীকার করে সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মিজানুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিট হলেও জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পায়নি। এ ছাড়াও বেতন-ভাতা বন্ধের জন্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোনো লিখিত চিঠি না আসায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম জানান, জাল সনদধারীদের বিষয়ে এনটিআরসি থেকে সনদ যাচাইয়ের কোনো নিদের্শনা আসেনি। তালিকা পেলে সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়াও তালিকাভুক্ত শিক্ষকের বেতন বন্ধ করার সুপারিশের কোনো চিঠি তার বিভাগে আসেনি।
এসএন