তেল-সারে আমন চাষে শঙ্কা, বিপাকে চাষিরা
রোপা আমনের এই ভরা মৌসুমে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানোর পর ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। একদিকে তীব্র রোদে জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়ায় কয়েক দফায় সেচ দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে হঠাৎ করে ইউরিয়া সার ও তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় চলতি আমন মৌসুমে চাষাবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে কৃষকরা। আগে ৮০ টাকা লিটার ডিজেল কিনে জমিতে সেচ দিতেন কৃষকেরা। পহেলা আগস্ট থেকে লিটারপ্রতি ১১৪ টাকা দিয়ে ডিজেল কিনতে হচ্ছে তাঁদের। ফলে এ বছর আমন আবাদে লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় শঙ্কা করছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১লাখ ৩৭হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এর রিপরীতে ৯০ হাজার ৪০০ টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকেরা রোপা আমনের আবাদ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এ বছর সার, ডিজেলসহ কৃষি কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আসন্ন আমন মৌসুমে কমে যাবে চাষাবাদ।
এ পরিস্থিতিতে খোলা বাজারে সরকার নির্ধারিত মুল্যে সহজে মিলছে না সার। সেচ ও ডিলারদের কাছে বেশি দামে সার ক্রয়ের কারনে এবার বিঘা প্রতি ১৫-১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ গুনতে হবে বলে জানান কৃষকরা। আর এ থেকে বিঘায় ২২-২৪ মন ধান উৎপাদনের পর লোকসানের আশংকা তাদের। সার সংকট কাটাতে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়ার দাবি প্রান্তিক কৃষকের।
সদরের উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষক মুনসুর আলী বলেন, আগে যেখানে দশ একর জমি চাষ করতাম এখন দুই তিন একর জমি করছি। শুধু সার নয়, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় খরচের সঙ্গে ফসলের হিসাব মেলাতে পারবো না। অনেক ক্ষতি হবে। তাই শুধু নিজেদের যে পরিমাণ খাদ্য লাগবে সেটাই চাষাবাদ করেছি। আকচা ইউনিয়নের লিয়াকত আলি বলেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ধানের আবাদ কমে যাবে। যে কৃষক ২ হাজার মণ ধান উৎপাদন করে সে একশো মণ ধানের ফসল চাষ করবে। সার ডিজেল শ্রমিকের খরচ দিয়ে হিসাব করলে আমাদের ক্ষতি হবে।
বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশকৈল উপজেলার কৃষকেরা ঢাকাপ্রকাশকে জানান, হঠাৎ করে সার ডিজেল ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের বাড়তি খরচের ধকল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের দিন মজুরি বৃদ্ধিও একটি বড় সমস্যা। সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বিঘায় খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচ খরচ প্রতি বিঘায় প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: আব্দুল আজিজ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, রোপা আমন চাষ বৃষ্টিনির্ভর। এ বছর তেমন বৃষ্টি হয়নি। তার ওপর বেশ কিছুদিন ধরে খরায় পুড়ছে আমনের বীজতলা। এমন পরিস্থিতিতে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কোনো ভাবেই যাতে ডিলাররা সারের অতিরিক্ত মূল্য নিতে না পারে এবং সরকার নির্ধারিত দামেই যাতে সার বিক্রি হয়, সেদিকে আমরা কঠোর দৃষ্টি রাখছি।
এএজেড