রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর আজ, জড়িয়েছে ১৪ অপরাধে
নানা অঘটনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো আজ বুধবার (২৫ আগস্ট)। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে তারা ধ্বংস করেছে উখিয়া টেকনাফের ১২ হাজার একর বনভূমি। গেল পাঁচ বছরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ১৪ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পাঁচ বছর পূর্ণ করে ষষ্ঠ বছরে পা রাখল।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংকটকালে কয়েক দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ মিয়ানমারের অনিচ্ছার কারণে ব্যর্থ হয়। পাঁচ বছর পার হলেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মনে করেন, কিছু চিহ্নিত এনজিও রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আল ইয়াকিন, আরসা, আরএসও-সহ বিভিন্ন সংগঠন দলগতভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গারা আসার পর উখিয়া, টেকনাফসহ কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে বলে মনে করেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজ।
জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০২টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ইয়াবা, মানবপাচার ডাকাতি, ছিনতাই বেড়েছে। বদলে গেছে শ্রমবাজার। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা সরকার, এনজিও ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা থেকে খাদ্য ও নানা সহায়তা পাচ্ছে। ফলে তারা কম দামে শ্রম দিলেও তাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা যেহেতু কোনো সহায়তা পায় না সে জন্য শ্রমের টাকাই তাদের মূল উপার্জন।
কক্সবাজার জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফি উল্লাহ আনছারী জানান, শ্রম বাজার স্থানীয়দের হাতছাড়া হওয়ায় চরম অর্থ কষ্টে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের জন্য সরকারের উচিত বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে পূর্নবাসন করা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৪ ধরনের অপরাধে মোট ২ হাজার ৪৩৮ মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে মোট আসামির সংখ্যা ৫ হাজার ২২৬ জন। পাঁচ বছরে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দে নিহত হয়েছেন ১০২ জন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাঁচ বছরে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫টি, মাদক উদ্ধার মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি। ধর্ষণ মামলা ৮৮টি। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায়ের চেষ্টা মামলা হয়েছে ৩৯টি। হত্যা মামলার সংখ্যা শতাধিক। যেখানে জোড়া খুন, ৬ খুনের ঘটনাও রয়েছে।
পাঁচ বছর পার হলেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে যাওয়ার লক্ষণ না দেখায় ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় জনগণ। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তারা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে অপরাধের মাত্রা সহনীয় পর্যায় অতিক্রম করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবিও কাজ করছেন।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গারা পর্যটন শিল্পের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেহ ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করছে না।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সরওয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ১২ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস করেছে গেল পাঁচ বছরে। যা অর্থ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়।
টিটি/