টাকার বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে। তার অফিসে চুড়ান্ত বিল প্রদানের আগে বাধ্যতামূলক ৫ শতাংশ টাকা ঘুষ প্রদান, উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের কাছ থেকে ১ শতাংশ টাকা উৎকোচ নিয়ে এলাকা বন্টন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুষ্টিয়া জেলার ঘনিষ্ট স্বজন মেসার্স সৈকত কনস্ট্রাকশন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের কাজ বাগিয়ে ৫ শতাংশ টাকা নিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে বিক্রি এবং আসবাবপত্র সরবরাহ কাজের ৩৯টি দরপত্রের মধ্যে ২৬টি কাজ কোটি টাকার বিনিময়ে মনোনীত ঠিকাদারকে দেওয়াসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে নিজেকে আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে কুড়িগ্রাম থেকে টাঙ্গাইল জেলায় বদলির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অবিলম্বে নানা অপকর্ম আর দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ঠিকাদাররা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ৩ হাজার স্কুল, মাদ্রাসা ও ভ্যাটিক্যাল প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো কাজ চলমান। এর মধ্যে গত ২৯ জুলাই জেলার ৩ হাজার স্কুল প্রকল্পের আসবাবপত্র সরবরাহ কাজের ৩৯টি দরপত্র আহ্বান করা হয়। তার মধ্যে ১ কোটি টাকা উৎকোচের বিনিময়ে নিজের মনোনীত ঠিকাদার মেসার্স জহুরুল হক দুলাল কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী রনিকে ২৬টি কাজ পাইয়ে দেন নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী। বাকী ১৩টি কাজ পান দুই/তিনজন ঠিকাদার।
দরপত্র দাখিলে রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার ঠিকাদাররা এ কাজে অংশগ্রহণের নিয়ম থাকলেও নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী উৎকোচ গ্রহণের উদ্দেশে বিশেষ কায়দায় শুধুমাত্র কুড়িগ্রামের ৫/৬ জন ঠিকাদারকে দরপত্র দাখিলের সুযোগ দেন। একক নামে ২৬টি কাজ পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন সাধারণ ঠিকাদাররা। প্রতিবাদ করলে একাধিক ঠিকাদারকে পুলিশি হয়রানি করান ওই প্রকৌশলী। পরে জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করেন সাধারণ ঠিকাদাররা।
সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান আলীর মনোনীত মেসার্স সৈকত কনস্ট্রাকশনের নামে লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় দরপত্রে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া মেসার্স জহুরুল হক কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী রনিসহ কিছু ঠিকাদারের সঙ্গে প্রকৌশলী শাহজাহান আলী গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতেন। যাতে সাধারণ ঠিকাদাররা প্রয়োজনে তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ না পায়। প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোনও কিছু বললেই সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট এবং দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা হয়রানি করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশলের এক কর্মচারী জানান, প্রতিটি কাজের বিলের সময় হিসাব রক্ষক আফজাল এবং অফিস পিয়ন নুর আমিনের মাধ্যমে ৫ শতাংশ ঘুষ নিতেন নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী। এ ছাড়া তিনি ১ শতাংশ উৎকোচের বিনিময়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী তপন কুমার সাহাকে ৪টি উপজেলা এবং বিজন কুমার রায়কে ৪টি উপজেলার দায়িত্ব দেন। নির্দিষ্ট পিসি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় সৎ অফিসার হিসেবে পরিচিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রেজাউল হককে শুধুমাত্র রৌমারী উপজেলার দায়িত্ব দেন। কারণ তিনি ঘুষ খান না। এ ঘটনায় অন্যান্য স্টাফদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ইতিমধ্যে রংপুরে ক্লিনিক ব্যবসা, ঢাকা শহরে ২টি ফ্ল্যাট ক্রয় এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে নামে-বেনামে প্রচুর পরিমাণ জমি কিনেছেন। এদিকে তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তড়িঘড়ি করে টাঙ্গাইল জেলায় বদলি হয়ে যান। তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ঠিকাদাররা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত প্রকৌশলী শাহজাহান আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঠিকাদার রনিকে ফোন দিলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারেক আনোয়ার জাহেদী বলেন, একক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে ২৬টি কাজ পাওয়ার সুযোগ আছে যদি সেই প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সক্ষমতা থাকে। দুই ধরনের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়। সেটি হলো এলটিএম এবং ওটিএম। ওটিএমে সারাদেশের ঠিকাদাররা অংশগ্রহণ করতে পারবে আর এলটিএমে প্রকৌশলী নির্ধারণ করে কোন জেলার ঠিকাদাররা অংশগ্রহণ করবে। ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সুবিধা হলো কেউ যদি এখানে কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকে তাহলে পার পাবার সুযোগ নেই। কারণ দশ বছর পর হলেও তা শনাক্ত করা সম্ভব। তিনি অনিয়মের বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এসআইএইচ