‘চাকরি নয়, ২১ আগস্টের ঘাতকদের রায় কার্যকর চাই’
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গঙ্গানারায়ন গ্রামের রেজিয়া বেগম। তার বাবা আফাজ উদ্দিন অসুস্থতার কারণে চলাফেরা করতে পারতেন না। বেশ কয়েক বছর ধরে ছিলেন শয্যাশায়ী। বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে ও জীবিকার তাগিদে রংপুর ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি দেন রেজিয়া। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় প্রাণে বাঁচতে পারেননি তিনি।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের একজন রেজিয়া বেগম। মেয়ের মৃত্যুর পর আরও ৫ বছর বেঁচে ছিলেন আফাজ উদ্দিন। মৃত্যুর আগে ঘাতকদের সাজা দেখে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা আর পূর্ণ হয়নি।
রেজিয়া বেগমের ক্ষুব্ধ স্বজনদের প্রশ্ন, ‘২১ আগস্টের ঘাতকদের রায় কার্যকরের খবর শুনতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?’
রেজিনা বেগমের ছোট ছেলে নুরুন্নবী জানান, ১৯৯০ সালে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমান তার মা রেজিয়া বেগম। বাড্ডা এলাকায় ভারতীয় ভিসা অফিসে কাজ করতেন। থাকতেন একই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। সেখানে মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী আয়শা মোকারমের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর রেজিয়াও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সমাবেশে মিছিলে সক্রিয় ছিলেন।
২১ আগস্ট সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে আয়শা মোকাররমের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে ছিলেন রেজিয়া বেগম। ট্রাক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শেষ করার পর পরই শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে উঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণে মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশ এলাকা। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১৬ জন। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ২৪ জনে দাঁড়ায়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন রেজিয়া বেগম। পরদিন তার ছোট ছেলে নুরন্নবী মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
একই বছরে নিহতের পরিবারকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাদের ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
স্বজনদের দাবি, তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, রেজিয়ার সন্তান বা তার স্বজনদের সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা দীর্ঘ ৮ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এরপরও তাদের চাওয়া, শুধু মায়ের হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা।
রেজিয়া বেগমের বড় বোন আনোয়ারা বেগম বলেন, প্রতিবছর ২১ আগস্টের ঘটনাগুলো টেলিভিশনে দেখি আর কাঁদি। চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের কী করার আছে?
রেজিয়ার বড় ছেলে হারুন-অর- রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন পার হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের কয়েকজনের বিচার হয়েছে। আমার বিশ্বাস, মায়ের হত্যার বিচারও আমরা পাব।
ছোট ছেলে নুরন্নবী বলেন, সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আমরা কেউ পাইনি। তারপরও আমার পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের এই সরকারের আমলেই রায় কার্যকর চাই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের খোঁজ রাখে না। আমার মায়ের জন্য কোনো দোয়া মাহফিলের আয়োজনও করেন না।
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে রেজিয়ার পরিবার যেন সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাধ্যমতো তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের অক্টোবরে এ ঘটনায় করা মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলা এখন দ্বিতীয় ধাপে হাইকোর্টে শুনানি শুরুর পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা যায়।
এসজি/