গ্রেনেড হামলা
মৃত ভেবে মর্গে ফেলে রাখা হয় মাহবুবা পারভীনকে
আজ রবিবার, ভয়াল ২১শে আগষ্ট। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের একটি কলঙ্কময় দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে আইভি রহমানসহ প্রায় ২৪ জন মারা যান এবং আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রায় ৩০০ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই বেঁচে আছেন শরীরে স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে। সেই নৃশংস বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে ১৭৯৮টা স্প্লিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন।
মাহবুবা পারভীন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সেদিন গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন নারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদেরই একজন আমি। আমাকে মৃত ভেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার দাদা সেখানে লাশ শনাক্ত করতে গেলে আমাকে জীবিত দেখতে পান। পরে প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। দেশে আমার চিকিৎসা ভালো না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আপা আমাকে কলকাতায় পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতাল থেকে তাকে জানানো হয়েছিল প্রায় ১৮০০ স্প্লিন্টার আমার শরীরে রয়েছে। এর মধ্যে মাথার দুটি স্প্লিন্টার আমাকে অনবরত যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। মাঝেমধ্যেই ব্যথায় আমি পাগলের মতো হয়ে যাই। আমার পা থেকে দুটি স্প্লিন্টার অপারেশন করে বের করা হয়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি আমি। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনও নেতা-কর্মীরাও তার কোনও খোঁজ-খবর নেন না। সাভারের নেতা-কর্মীদের বাড়ি গাড়ীর অভাব নেই। তবে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ আহত মাহবুবার খোঁজ-খবর রাখে না। কিন্তু আমাকে অন্যের সহায়তায় রিকশা কিংবা বাসে যাতায়াত করতে হয় এখনও।’
আবেগজড়িত কণ্ঠে মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘২১ আগস্ট এলেই এর ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়ে যায়। এখনও ঘুমের মধ্যে, মাঝেমধ্যে আঁতকে উঠি, কান্নায় চোখ-মুখ ভিজে যায়। ওই দৃশ্য মনে করলে ভয়ে তার দেহ অবশ হয়ে যায়। আমি কেন বেঁচে আছি। অন্যান্যদের সঙ্গে আমি কেন গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুবরণ করলাম না। আমি যেন বেঁচেও এক মরা মানুষ। যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি আমি। মৃত্যুর আগে শুধুমাত্র এ জঘন্য হামলার সঙ্গে যারা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে চাই।
বর্তমানে ঢাকা জেলা (উত্তর) আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পদে আছেন মাহবুবা পারভীন। ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর তার স্বামী ফ্লাইট সার্জেন্ট (অব.) এম এ মাসুদ স্ট্রোক করে মারা যায়। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আসিফ পারভেজ একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। আর বিদেশে থাকেন ছোট ছেলে রোওশাদ যোবায়ের ।
জানা গেছে, গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর মাহবুবা পারভীনকে এককালীন ১০ লাখ টাকার সঞ্চয় পত্র দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে প্রতি মাসে তার চিকিৎসা খরচের জন্য দেন ১০ হাজার টাকা। আর বসবাস করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১৪০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট পান তিনি।