পরিবারের একমাত্র সুস্থ মানুষটাকেও মেরে ফেলল ওরা
'ওর বাবা-মা, ভাই সবাই প্রতিবন্ধী। ওই একমাত্র সুস্থ ছিল। কিন্তু শত্রুতা করে বাচ্চা মেয়েটাকে মারতে মারতে মেরেই ফেললো ওরা।' এভাবেই ননদের মৃত্যুর কথা জানাচ্ছিলেন সাভারের কাউন্দিয়ার গৃহবধূ মীম আক্তার। গত ১৭ আগস্ট সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের বুড়িরটেক দক্ষিণ কাউন্দিয়া এলাকার প্রতিবন্ধী মো: রতন মোল্লার মেয়ে আমেনা আক্তার রত্নাকে (১২) মারধর করে প্রতিবেশী জালাল (৩৫) ও তার স্ত্রী লাইলি (৩০)।
এর জেরে গতকাল শুক্রবার রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান, দিনমজুর বাবা-মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে ছিল রত্নার পরিবার। এরমধ্যে সকলেই বাক ও শারিরীক প্রতিবন্ধী। পুরো পরিবারে একমাত্র সুস্থ ছিল রত্না। তাকে হারিয়ে যেনো দিশাহারা পুরো পরিবার। বাবা-মায়ের চোখের জলে জানান দিচ্ছিল সন্তান হারানোর বেদনা।
রত্নার ভাবী মীম আক্তার জানালেন পুরো ঘটনা। বলেন, গত কয়েকদিন আগে স্থানীয় দোকানদার জালালের দোকানে যান রত্না। ওই সময় দোকানে দাড়িয়ে জালালের সঙ্গে তর্কাতর্কি করছিলেন তার স্ত্রী লাইলি। একই সময় তার পরকীয়া প্রেমিকার ভাইয়ের বউও দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
সেদিনের পরে জালালের পরকীয়ার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হয়ে যায়। ঘটনাটি রটানোর জন্য ওই দোকানদার দম্পতি ১৭ আগস্ট রত্নার বাড়ি এসে তার কাছে বিষয়টি জানাজানির বিষয়ে জানতে চাইলে রত্না সেটি অস্বীকার করে। এরপরেও তারা রত্নাকে চুলের মুঠি ধরে টেনে বাড়ির সামনেই বেধড়ক মারধর করে। স্বামী-স্ত্রী মিলে মারধর করলে আশপাশের লোকজন এসে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। ওই সময় রত্নার বাবা-মা কাজের জন্য বাইরে ছিল।
এরপর গত কয়েকদিন ধরে সে খারাপ লাগছে জানায়। পরে গতকাল রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই রাতে সে মারা যায়। তিনি বলেন, পরিবারের একমাত্র সুস্থ ছিল সে। তার মৃত্যুতে প্রতিবন্ধী পরিবারটি একরকম সহায়হীন হয়ে পড়লো। এর সুষ্ঠু বিচার চাই আমরা।
কাউন্দিয়ার শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন রত্না। তার মৃত্যুতে শোকার্ত শিক্ষক ও সহপাঠীরাও। রত্নার মৃত্যুর খবরে দুপুরের দিকে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে ঘাতকদের শাস্তি দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল কবীর আজাদ বলেন, রত্না আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। একটা বাচ্চা মেয়ে ঠিক কি করতে পারে। যে তাকে এভাবে মারতে মারতে মেরেই ফেললো। আমিসহ আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ম্যানেজিং কমিটির সকলে এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচারের দাবি জানাই।
কাউন্দিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সুব্রত কুমার বলেন, ওই কিশোরীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। যে আলামত পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএজেড