পানি খাওয়ার অপরাধে শিক্ষার্থীর হাত ভেঙে দিল শিক্ষক
পানি খাওয়ার অপরাধে আনিসা আক্তার (১১) নামে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ সময় আনিসা আক্তারসহ আরও সাতজন শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। গত ১ আগস্ট দুপুরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ১০৩ নম্বর সেন্ট্রাল আবাদ চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আবুল হোসেন বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরারব একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী আনিসা আক্তার ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও চন্ডিপুর এলাকার আবুল হোসেনের মেয়ে। বর্তমানে সে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে আহত আনিসা আক্তার বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে শহিদুল স্যার আমাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে ক্লাসে যাওয়ার কথা বলে। তবে আমিসহ আমার কয়েকজন সহপাঠীদের পানি পিপাসা লাগায় আমরা পানি খেতে যাই। এতে করে শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করতে আমাদের একটু দেরি হয়। তবে স্যার আমাদের কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমাদের বেধড়কভাবে মারধর করতে থাকে। এতে আমিসহ আমার সাতজন সহপাঠী কম-বেশি আহত হয়।
আহত শিশুর পিতা আবুল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে আমার মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসে। এ সময় তার কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, স্যার আমাকে মেরেছে আমার হাতে প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে আমি সহ্য করতে পারছি না। এক পর্যায়ে মেয়ের অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার হাতের এক্সে করানোর কথা বলেন। এক্সে রিপোর্টে দেখা যায় তার বাম হাতের কব্জির দুইটি হাড় ভেঙে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমি একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। তবে অভিযুক্ত শিক্ষককের বড় ভাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হওয়ায় বর্তমানে আমাদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। এতে করে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভিতরে রয়েছি।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করতে এসেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। আমি বাচ্চাদের ক্লাসে যেতে বলেছিলাম কিন্তু কেউ কথা শুনছিল না। তাই আমি লাঠি দিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মেরেছিলাম। তবে কাউকে এমনভাবে মারা হয়নি, যাতে তাদের হাত ভেঙে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সৌভিক রায় বলেন, শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আমি বিদ্যালয়ে ছিলাম না। উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে ছিলাম। পরে ঘটনাটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিয়া বলেন, আমি প্রধান শিক্ষকের কাছে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন সহকারি শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআইএইচ