পবায় তিন মাস ধরে নষ্ট গভীর নলকূপ

রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর এলাকার কৃষক আশরাফ আলী। গত রমজানের আগে দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে রবি শস্য ভুট্টা রোপণ করেছিলেন। রোপণের কিছুদিন পরই নষ্ট হয়ে যায় জমিতে সেচ দেওয়ার একমাত্র গভীর নলকূপটি। এরপর নলকূপ ড্রাইভার ও জনপ্রতিনিধিদের পেছনে ঘুরে তিন মাস ধরে শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। সমাধান মেলেনি। বৃষ্টির পানিতে ভুট্টার গাছ না মরলেও কমেছে উৎপাদন। দুই বিঘা জমি থেকে ভুট্টা পেয়েছেন মাত্র ২০ মণ। যা থেকে তার উৎপাদন খরচও ওঠেনি।
ঋণের টাকায় অন্যের জমি লিজ নিয়ে ভুট্টার আবাদের পর এবার পানি সংকটে আউশের বীজতলাও করতে পারেন নি। আউশের আবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না? এমন শঙ্কা নিয়ে আবারও নলকূপ ড্রাইভার আর জনপ্রতিনিধিদের দোঁয়ারে ঘুরছেন। কিন্তু এবারও মিলছে সেই আশ্বাস, দ্রুতই ঠিক করা হবে। এই চিত্র শুধু কৃষক আশরাফ আলীর একার নয়, পবা উপজেলার মুরারীপুর ও মধুপুরের দুইটি গভীর নলকূপের অধীনে আবাদকারী সকল কৃষকদের। অনেকে পানি না পাওয়ায় জমি পরিত্যক্ত রাখতেও বাধ্য হয়েছেন। কৃষকদের চোখে-মুখে এখন চিন্তার ছাপ।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, মুরারীপুরে অবস্থিত গভীর নলকূপের অধীনে আড়াইশ বিঘার উপরে তিন ফসলি জমি রয়েছে। এ ছাড়া মধুপুরে অবস্থিত গভীর নলকূপের অধীনে রয়েছে ১৭০ বিঘার অধিক তিন ফসলি জমি। যে জমিগুলোর আবাদ পুরোপুরি গভীর নলকূপের উপর নির্ভরশীল। এখন পানির না থাকায় আউশের আবাদসহ কপি ও লাভজনক অন্যান্য সবজি আবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। বুধবার (৬ জুলাই) বিকেলে ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোতে এসময় জমি প্রস্তুত করতে কৃষকদের ব্যস্ততা থাকলেও এবার সেটা নেই। পানি না থাকায় ধানের বদলে অনেকে 'ঘাস' লাগিয়েছেন। অনেক জমি পতিত রয়েছে। জমিতে আগাছাও জন্ম নিয়েছে।
কৃষক সাইমুর রহমান সাইম জানান, তিনি কিছু জমিতে কপির আবাদ করবেন। আর কিছু জমিতে ধান লাগাবেন। কিন্তু এর কোনটাই করতে পারছেন না। কারণ গভীর নলকূপ নষ্ট। বিগত তিন মাস তার দুই বিঘার মতো জমি পতিতই ছিলো। এবারও পতিত থাকার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মুরারীপুরে অবস্থিত গভীর নলকূপের অপারেটর মাঈনুল ইসলাম জানান, তার নলকূপ নষ্ট হওয়ার পর থেকেই জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা বিএমডিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিক করে দেবেন এমন আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আজও ঠিক হয় নি। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাশ্ববর্তী গোদাগাড়িতে পানি না পেয়ে কৃষক আত্মহত্যার মতো ঘটনাও সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে। সার্বিক দিক-বিবেচনায় তিনি উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছেন।
তিনি আরও জানান, উপজেলা বিএমডি অফিস থেকে নলকূপটি ঠিক করতে এককালীন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা করতে বলেছেন। এছাড়া যখন কাজ চলবে সে সময় ঠিকাদারের পেছনেও কিছু খরচ আছে বলে জানিয়েছেন। কৃষকদের থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। কিন্তু নলকূপটি দ্রুত মেরামত করার দাবি কৃষকদের। মধুপুর এলাকার গভীর নলকূপ অপারেটর এনামুল হক জানান, তার নলকূপটি প্রথম রমজান থেকেই নষ্ট। তিনিও সমাধানের জন্য চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে পবা উপজেলা বিএমডিএ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, ওই দুটি গভীর নলকূপ নতুন করে বসাতে হবে। এ বিষয়ক প্রস্তাবনা তৈরি করে হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে বলে আশা করছি। আর নিয়ম অনুযায়ী কৃষকদের ১ লক্ষ টাকা জমা করা লাগে। সেটা জমা দিতে বলা হয়েছে। দেড় লক্ষ টাকার বিষয়ে তার জানা নাই। এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এএজেড
