চাঁদপুরের হাইমচরে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সম্প্রতি সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। নিহত সাতজনের একজন, মাগুরার সজীবুল ইসলামের মৃত্যু শোক সইতে না পেরে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে তার বাবা দাউদ মোল্লা মারা গেছেন।
গত সোমবার ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে দাউদ মোল্লা এক মুহূর্তের জন্য শান্ত হতে পারেননি। কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে গতকাল রাত পৌনে ১২টায় বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সজীবুলের মামা আহাদ সরদার দাউদ মোল্লার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, আজ সজীবুলের বিয়ের পাঁচ মাস পূর্ণ হলো। স্বপ্ন ছিল পদোন্নতি পেলে বড় জাহাজে চাকরি করবে। সব শেষ হয়ে গেল।
পাঁচ বছর ধরে জাহাজের বিভিন্ন পদে চাকরি করেছিলেন সজীবুল ইসলাম। সম্প্রতি জাহাজের চাকরিতে পদোন্নতি পেতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেই ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। মাঝের এই সময়টায় বসে না থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে গ্রিজার পদে চাকরি নেন।
সজীবুল ইসলামের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নে। গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রহমান জানান, জাহাজে হত্যার শিকার সজীবুলের বাবা দাউদ মোল্যার মৃত্যুর সংবাদ রাতেই জানতে পেরেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরার মহম্মদপুর ও নড়াইল সীমান্তবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের বহু মানুষ জাহাজে চাকরি করেন। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এমভি সুলতান সানজানা নামের লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় মহম্মদপুরের পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের চারজন নিহত হন।
সোমবার এমভি আল-বাখেরা নামের ওই জাহাজ থেকে মোট সাতজনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এর মধ্যে পাঁচজনকে পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর বাইরে গুরুতর আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা খালের মুখ এলাকায় মেঘনা নদীর একটি ডুবোচরে এমভি আল-বাখেরা নামের জাহাজটি নোঙর করা ছিল। গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে নৌ পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে।
নৌ পুলিশ জানিয়েছে, জাহাজের কর্মীদের ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। কারও মাথায় গভীর আঘাত, কারও গলা কাটা, শরীরে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এই হত্যাকাণ্ড শুধু ওই সাতজনের জীবন কেড়ে নেয়নি, তাদের স্বজনদেরও চরম শোক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সজীবুলের বাবার মৃত্যুর ঘটনা হৃদয়বিদারক বাস্তবতার আরেকটি অধ্যায় যোগ করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের নৃশংস ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।