চট্টগ্রামে বেহাল সড়কে দুর্ভোগ চরমে
চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর এখন বেহাল অবস্থা। চলতি মাসের শুরুতে ভারী বর্ষণের কারণে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নিচু এলাকা। কিন্তু বৃষ্টিপাত থামলেও সড়কের দুরবস্থা, খানাখন্দ, ক্ষতচিহ্ন এখনও চোখে পড়ছে। ফলে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। পথচারীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গেল ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। ৭ ডিসেম্বর কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে নগরীর নিচু এলাকার সড়ক তলিয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর বৃষ্টিপাত থামে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ভারি বর্ষণে সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়ে। শুকনো মৌসুমকে সামনে রেখে শুরু হওয়া সড়ক সংস্কার কাজের গতিও শ্লথ হয়ে গেছে। তবে ভাঙা সড়ক দ্রুত মেরামতের আশ্বাস দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম নগরীতে সড়কগুলোর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা সড়কের মেরামত কাজ অব্যাহত রেখেছি। বৃষ্টিতে নির্মাণ সামগ্রীর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এখন বৃষ্টিপাত নেই। পুরোদমে সংস্কার কাজ চললে সড়কের দুরবস্থা থাকবে না।’
সরেজমিন নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ছোট ছোট গর্তের কারণে বড় সড়কের পরিধি ছোট হয়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ইট পাথর বিটুমিন উঠে গেছে সড়কের বিভিন্ন স্থানে। নগরীর পোর্ট কানেকটিং সড়ক, ডি.টি রোড, বহদ্দারহাট, ঈদগাহ, চকবাজারসহ প্রতিটি সড়কে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গাড়ি চালকদের। গর্তের কারণে বারবার গাড়ি আটকে যায়। এতে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
অভিযোগ রয়েছে, সড়কগুলো তৈরি করা হয়েছে নিম্নমানের ইট, পাথর, বিটুমিন দিয়ে। এতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বেহাল হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর নগরীতে ভারী বৃষ্টিতে সড়কের দুরবস্থা দেখা দেয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান বলেন, ‘সড়ক সংস্কার কিংবা তৈরির সময় ভালো মানের বিটুমিনসহ অন্য উপকরণ দেওয়া হয় না। বলতে গেলে মানহীন উপকরণ দিয়ে চলে সংস্কার কাজ। তাতে টানা বৃষ্টির ধকল সইতে পারে না অধিকাংশ সড়ক। মুহূর্তেই সড়কের চিত্র পাল্টে যায়। ভারী বৃষ্টিতে সড়কগুলো যানবাহন চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের দুর্দশা লাঘবে ভাঙা সড়কগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। যাতে চরাচলে কোনো সমস্যা না হয়।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নগরীতে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো তাৎক্ষণিক মেরামত কাজ পরিচালনার নিয়ম আছে। কিন্তু মেরামত চলে ঢিমেতালে। বহু সড়কে মেরামত কাজ পরিচালনা করা হয়নি। আবার বেহাল সব সড়কে মেরামত কাজ একসঙ্গে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তাই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে এখনও খানাখন্দ চোখে পড়ছে। চলতি সপ্তাহে মেরামত কাজ শেষ করা হবে।
এদিকে নগরীর অভ্যন্তরে ভাঙা রাস্তার চলাচলের কারণে লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেওয়ানহাট এলাকায় নিয়মিত চলাচল করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী জাহিদ হাসান সবুজ। তিনি বলেন, ‘আগ্রাবাদমুখী সড়কের দুই পাশের সড়কের অবস্থা খুব নাজুক। রাস্তার অবস্থা এতো যে বেহাল অবস্থা চলাফেরা করতে ভয় লাগে। দেওয়ানহাট থেকে আগ্রাবাদ গেলে সারাদিন আর কিছু করতে হয় না। ভাঙা রাস্তায়, যানজটে সময় সব চলে যায়। সিটি বাসগুলো চলে ঝুঁকি নিয়ে। সড়কে ভাঙা অংশে চলার সময় দেখলে মনে হয় এখনই উল্টে যাবে।’
নগরীর হালিশহর এলাকার শিক্ষার্থী নুর নবী রবিন বলেন, ‘হালিশহর থেকে রিয়াজুদ্দিন বাজার গেলে দেখা যায় রাস্তার কি করুণ দশা। ভাঙা রাস্তায় বাসে চললে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। বাস এমন কাত হয় মনে হয় বাস এখনই উল্টে যাবে।
নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, ‘বহদ্দারহাট থেকে সিএন্ডবি রাস্তার মাথা সড়কের অবস্থা আরও নাজুক। শীতকালেও বর্ষার দিনের মতো অবস্থা। রাস্তায় ছোট-বড় গর্তে পানি জমে আছে। অধিকাংশ অংশে কাদা জমে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।’
টিএস/এএন