বর্ণাঢ্য আয়োজনে নওগাঁর হানাদারমুক্ত দিবস পালিত
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে নওগাঁয় হানাদারমুক্ত দিবস পালন করা হয়েছে। স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের এ-টিম মাঠে আয়োজিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় দুটি দলে ৩০টি ঘোড়া অংশ নেয়। এতে অংশ নিয়ে সবার দৃষ্টি কাড়ে ঘোড়সওয়ার কিশোরী তাসমিনা আক্তার। তাসমিনাসহ অন্য ঘোড়সওয়ারীদের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে মাঠে ভিড় করে হাজারো মানুষ।
‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে মজিবর রহমানের ঘোড়া। দ্বিতীয় হয়েছে নাজমুলের ঘোড়া এবং তৃতীয় হয়েছে তাসমিনার ঘোড়া। ‘খ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে আব্দুল্লাহর ঘোড়া, দ্বিতীয় হয়েছে হামিদুলের ঘোড়া এবং তৃতীয় হয়েছে কামরুলের ঘোড়া। উভয় গ্রুপের প্রথম স্থান অধিকারীদের একটি করে টেলিভিশন এবং বাকি দুজনকে একটি করে মুঠোফোন উপহার দেওয়া হয়।
ঘোড়সওয়ার কিশোরী তাসমিনাকে নিয়ে ২০১৫ সালের ১৭ জুন ‘এক দুঃখী ঘোড়সওয়ারের গল্প’ শিরোনামে প্রথম আলোর ‘অধুনা’ পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে তাসমিনাকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে প্রথম আলো। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলো ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রকাশ হলে তাসমিনার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে তাকে একটি ঘোড়া উপহার দেয় প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি ওই কিশোরীকে সহায়তা করে। বর্তমানে তাসমিনা ধামইরহাট এম এম ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
এর আগে একুশে পরিষদের উদ্যোগে সকাল ১০টার দিকে শহরের এ-টিম মাঠ থেকে জেলা শহরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় এ-টিম মাঠে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে এ-টিম মাঠ অস্থায়ী মঞ্চে নওগাঁ মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নওগাঁ সদর আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর্জা ইমাম উদ্দিন, একুশে পরিষদ নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন লিটন প্রমুখ।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক বিজয়ের পরদিনও যুদ্ধ হয় নওগাঁয়। নওগাঁয় বিভিন্ন জায়গায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন সাবেক সাংসদ ও একুশে পরিষদ নওগাঁর উপদেষ্টা ওহিদুর রহমান। শনিবারের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের খবর জানার পর নওগাঁর যুদ্ধকালীন কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরী, নওগাঁ শহর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিসেনারা শহরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। এতে শহীদ হন ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা। পরদিন মিত্রবাহনী যোগ দিলে পাকবাহনী আত্মসমর্পণ করে। বিজয়ের দুই দিন পরে নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয়। এজন্য দিবসটির তাৎপর্য নওগাঁবাসীর কাছে ব্যাপক।’
এসআর/এএন