টিপকাণ্ডে মন্তব্য: সিলেটের সেই এসআইকে প্রত্যাহার
টিপ পরায় কলেজ শিক্ষককে হেনস্তাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়ায় সিলেট জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সোমবার (৪ এপ্রিল) রাত ১১টায় তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফুর রহমান।
তিনি জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে লিয়াকতকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে সোমবার বিকেল প্রায় সাড়ে ৩টায় লিয়াকত আলী টিপকাণ্ড নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি লেখা পোস্ট করেন। কলেজ শিক্ষককে পুলিশের হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে দেশজুড়ে যখন তোলপাড়, তখন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের ওই ফেসবুক স্ট্যাটাস সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।
সোমবার দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন (মূল পোস্টের বানান অপরিবর্তিত), ‘টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানির করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যত ভাবনায় শংকিত। বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোষাক পড়ে চলাফেরা করেন - তারমধ্যে অনেকেরই ব্রা’য়ের উপরে দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারনে বাকী অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পড়ার কারনে কোনো নারীকে হয়রানী করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন???’
এ স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমি মন্তব্য করেছি ভালো দিক নিয়ে। কিন্তু বিষয়টিকে নিয়ে ঘোলা জলে মাছ শিকার করা হচ্ছে। প্রতিবাদের ভাষা আরও ভিন্নভাবে হতে পারত। এর প্রতিবাদ জানাতে পুরুষদের টিপ পরার প্রয়োজন ছিল না।’
স্ট্যাটাস কেন ডিলিট করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে লিয়াকত বলেন, ‘আমার ভালো লাগছিল তাই দিয়েছিলাম। পরে ভালো লাগেনি, তাই সরিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া ওটা আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক কিছু না।’
পুলিশের এ কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে হতবাক সিলেটের সুশীল সমাজ। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘টিপ নিয়ে একজন পুলিশের আপত্তিকর মন্তব্যে যেখানে বিক্ষুব্ধ সারাদেশ সেখানে সিলেটের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহরে দায়িত্ব পালন করা একজন পুলিশ সদস্যের এমন মন্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এমন চিন্তা-চেতনার লোক রাষ্ট্রের মূলনীতি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাই পুলিশের মতো সংবেদনশীল বিভাগ থেকে লিয়াকত আলীর মতো ব্যক্তিদের অপসারণ করতে হবে।’
সিলেট জেলা বারের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন বলেন, সিলেটেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য কুরুচিপূর্ণ অসম্মানজনক উক্তি সম্বলিত মন্তব্য করেছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। জনগণের পয়সায় পালিত কোনো কর্মচারী, জনগণের বিরুদ্ধে এ ধরনের অশালীন কথা বা মন্তব্য করবে তা খতিয়ে দেখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। যারা রাষ্ট্রের জনগণের মান-মর্যাদা রক্ষায় নিয়োজিত, তারাই যদি এসব করেন তাহলে গভীর উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ফৌজদারি অপরাধ। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এসএন