সুনামগঞ্জে বাঘার বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি, তলিয়ে যাচ্ছে ফসলের জমি
সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে বোরো ধানের ক্ষেতগুলো এখনো সবুজ ও কাঁচা। ফসল পাকতে আরও ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু কৃষকের শ্রমে-ঘামে ফলানো ‘সোনার ধান’ তলিয়ে যাচ্ছে ভারি বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বাঘার হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। কৃষকদের চোখের সামনেই ভেসে যাচ্ছে হাজার একর ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতার বাহিরে হওয়ায় এ বাঁধটিতে দেওয়া হয়নি কোনো প্রকল্প। শুরু থেকেই বাঘার হাওরে প্রকল্প দেওয়ার দাবি জানালেও পাউবো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সোমবার (৪ এপ্রিল) বিকাল নদীর পানি উপচে গিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। নিমিষেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের ফসল। নিজেদের ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও কাঁচি হাতে নেমেছে কাঁচা ধান কাটতে।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, বাঘার বাঁধ এলাকায় প্রায় এক হাজার একর জমি রয়েছে। শুরু থেকেই এই এলাকায় হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রকল্প না দিয়ে অপ্রয়োজনীয় জায়গায় প্রকল্প দিয়ে সরকারের টাকা লোপাট করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দাবি করছে সার্ভে টিমের ম্যাজারমেন্ট অনুযায়ী প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। এই হাওরের বাঁধটি আওতার বাহিরে।
দামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আওয়াল বলেন, ১০ কেয়ার জমি করেছি। আর এই হাওরেই সকল জমি। আমার চোখের সামনেই সবকিছু ভেসে যাচ্ছে। ধান যে কেটে আনবো সেরকমও হয়নি। কাঁচা রয়ে গেছে। একটু পাকলে হয়তো পানির মাঝেই কেটে আনতে পারতাম। শুধু আমার নয়, এ রকম গ্রামের আরও অনেক মানুষের ফসল ডুবেছে। বাঁধ ঠিকঠাক মতো না করায় এই দুভোর্গ আমাদের।
আরেক কৃষক আবু বক্কর বলেন, ৫০ কেয়ার জমির মাঝে ডুবে যাওয়া হাওরেই আমার ৩০ কেয়ার জমি। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। এই এলাকায় হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প দেয়ার জন্য একাধিকবার আবেদন করেছি। কোনো কাজ হয়নি। আমাদের এই ফসল ডুবির দায়ভার পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে। আমাদের তো গেছেই, অন্যান্য হাওরের বাঁধও হুমকির মুখে রয়েছে। সরকার টাকা দিয়েছে বাঁধ নির্মাণ করার জন্য, কিন্তু যারা স্থানীয়ভাবে কাজের দায়িত্বে ছিলেন তারা অবহেলা করেছেন, দুর্নীতি করেছেন।
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্র জয়ন্ত সরকার বলে, ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর বাবার কান্না দেখে নিজেই কাঁচি হাতে ধান কাটতে আসছি। কিন্তু ধান এখনো পাকেনি। এরপরও তলিয়ে যাওয়ার চেয়ে কিছু ধান ঘরে নিতে পারলে দুয়েক দিনের খাবার হবে।
শাল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী (এসও) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমাদের হাওর রক্ষা বাঁধ এখনো ভাঙেনি। যেদিকে বাঘার হাওরে পানি প্রবেশ করেছে, এটা আমাদের তালিকার বাহিরে। আর আমাদের আওতায় যে বাঁধগুলো রয়েছে সর্বক্ষণ মনিটরিং করছি। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ কোনো বাঁধ শাল্লায় নেই।
এমএসপি