পরিবারের ৬ জনই প্রতিবন্ধী, ভাতা পান একজন
ফরিদপুরের মধুখালীর মেগচামীর প্রতিবন্ধী জিয়া শেখের পরিবারের ছয় সদস্যই প্রতিবন্ধী। সংসার চালান ভিক্ষা করে। একজন প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও অন্যদের তা মেলেনি।
পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাত। শ্রবণ প্রতিবন্ধী জিয়া শেখ দিনমজুরির পাশাপাশি তালগাছ ও নারকেল গাছ পরিষ্কার করে চালাতেন সংসার। কিন্তু ছয় মাস আগে একটি তাল গাছ পরিষ্কার করতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। গাছ থেকে পড়ে জিয়ার কোমর ভেঙে যায়। হারান চলাচলের শক্তিও। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর চিকিৎসক বলেছেন অস্ত্রোপচারের কথা। কিন্তু সেই সামর্থ্য নেই তার পরিবারে।
এদিকে, পরিবারের ঘানি টানতে স্ত্রী আরজিনা বেগম স্থানীয় একটি মিলে মজুরের কাজ করতেন। আরজিনা নিজেও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। একপর্যায়ে মিলে কাজ করতে গিয়ে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
টিনের চালার এক কক্ষের একটি ঘর তুলে সেখানেই চার সন্তান, স্ত্রী ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মাকে নিয়ে বসবাস করছেন জিয়া। জিয়া শেখ জানান, তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। এর মধ্যে বড় ছেলে আকাশ জন্ম থেকেই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। ছয় বছর বয়সী ছোট মেয়ে ইয়াসমিন বাবা-মায়ের মতোই শ্রবণ প্রতিবন্ধী। শারীরিক কোনো সমস্যা নেই ১৪ বছর বয়সী মেয়ে হেলেনা ও আট বছর বয়সী তামিমের। হেলেনা মেগচামী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে এবং তামিম স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
জিয়া শেখ আরও জানান, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া গরুর-বাছুর পালন করে বিক্রির পর সেই টাকা দিয়ে গ্রামে তিন শতাংশ জমি কিনেছেন। সেখানে কোনোমতে একটি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বড় ছেলে আকাশ প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তার সঙ্গে মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় কোনোরকম চলছে তার সংসার। মাঝে মধ্যে তার বাড়ির চুলাও জ্বলে না। শিশু সন্তানদের নিয়ে ঠিকমতো না খেয়েই অনেকদিন কেটে যায়। তাদের এখন সম্বল বলতে সামান্য বাড়ির ভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আজম মোল্যা বলেন, এ হতদরিদ্র পরিবারটি খুবই অসহায়ত্বের মধ্যে আছে। এলাকাবাসী টাকা তুলে জিয়া শেখের চিকিৎসা করিয়েছে। এখন তার অপারেশনের জন্য বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কল্লোল সাহা বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে এ পরিবারের প্রতিটি প্রতিবন্ধী সদস্যকে জরিপের আওতায় এনে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করব এবং সরকারি বিশেষ যে প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা আছে সে ব্যবস্থাও করা হবে।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অসহায় পরিবারটির খোঁজ-খবর নিয়ে সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
এসএন