বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ
ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের চন্দ্রার বন্ধ হওয়া কারখানার বকেয়া বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন পাওনার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন করছেন মাহমুদ জিন্স লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা। এর ফলে দুই পাশের রাস্তার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ভোগান্তিতে পরেন যাত্রীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে চন্দ্রা মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ করেন।
মাহমুদ জিন্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চন্দ্রা ফ্লাইওভারের সংযোগ সড়কের উভয়পাশও অবরোধ করেন। এতে ওই সড়কে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
শিল্প পুলিশ, বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রা মোড় এলাকায় মাহামুদ জিন্স লিমিটেড নামে একটি কারখানা আছে। এ কারখানায় কাজ করতেন ৬০০ থেকে ৭০০ শ্রমিক। বিভিন্ন সংকটের কথা বলে কিছুদিন আগে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। আজ সকালে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন–ভাতাসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী সকাল থেকেই কারখানাটির সামনে আসতে থাকেন শ্রমিকেরা। কিন্তু এর মধ্যেই শ্রমিকদের পাওনা আজ পরিশোধ করা হবে না জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাঁরা চন্দ্রা মোড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক বিক্ষোভ করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শকের মো. আজাদ সাথে কথা বলে জানা যায়, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে অনেক শ্রমিক অন্যান্য জায়গায় চাকরি নিয়েছেন। কেউ কেউ এখনো বেকার। তাঁদের দুই মাসের বেতন ও অন্যান্য পাওনা আজ পরিশোধ করার কথা ছিল। সে জন্য শ্রমিকেরা সকাল থেকে কারখানার সামনে জড়ো হন। কিন্তু এর মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষ আজ পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না মর্মে নোটিশ টাঙিয়ে দেন। এ জন্য শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক ছাড়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা মহাসড়ক ছাড়ছেন না।
রাজধানীতে হাসনাতকে আবারও ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা
ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লা থেকে ঢাকা ফেরার পথে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আবারও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়ি। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, এর আগে মাতুয়াইল ও গুলিস্তানে দুইবার দুর্ঘটনার শিকার হয় তাকে বহন কারী গাড়ি। মাতুয়াইলে আঘাত করে পালিয়ে যায় একটি ট্রাক। আবার গুলিস্তানে আঘাত করে আরেকটি মিনি ট্রাক।
এদিকে পরপর এমন কয়েকটি ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা সন্দেহ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এর আগে গতকাল বুধবার অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মোড়ে হাসনাত ও সারজিসের গাড়িবহরের একটি প্রাইভেটকারকে চাপা দেয় একটি ট্রাক। এতে প্রাইভেটকারটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরে চাপা দেয়া ট্রাকটিকে জব্দ করে থানায় রাখা হয়। আটক করা হয়েছে চালককেও। আটক ট্রাকচালকের নাম মুজিবর রহমান (৪০)। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বইলর গ্রামে।
থমকে গেছে অর্থ পাচারের অনুসন্ধান, তদন্তে এস আলমের প্রভাব
ছবি: সংগৃহীত
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এক লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অনুসন্ধান কার্যক্রম বর্তমানে থমকে রয়েছে। সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটে এই তদন্ত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো অগ্রগতি ছাড়াই বন্ধ হয়ে আছে। এর পেছনে এস আলম গ্রুপের প্রভাব এবং দেশের প্রভাবশালী মহলের সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, ৩১ আগস্ট এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাঁদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন এবং তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আনলেও তাঁদের হঠাৎ বদলি করা হয়েছে।
বদলির পেছনে কারা?
জানা গেছে, তদন্ত প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করার উদ্দেশ্যে এস আলম গ্রুপের পক্ষে কাজ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। বিশেষ পুলিশ সুপার মো. সরোয়ার্দী হোসেন, অতিরিক্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবির এবং তদন্ত কর্মকর্তা মনির হোসেনকে একযোগে বদলি করা হয়। একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশেই এ বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবিরকে চট্টগ্রাম, এসএস মো. সরোয়ার্দী হোসেনকে র্যাবে এবং অনুসন্ধান কর্মকর্তা মনির হোসেনকে শিল্প পুলিশে বদলি করা হয়। তিন কর্মকর্তাকেই বদলি করে দেওয়ায় গত ১২ অক্টোবর থেকে অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান স্থবির। তদন্ত কর্মকর্তা এখন অনুসন্ধানের কাজ অন্য একজনকে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছেন।
সিআইডির সূত্র জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপের অর্থ পাচার অনুসন্ধানের কাজকে প্রভাবিত করার জন্য দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের বদলির নেপথ্যে একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত বলে জানা গেছে। অভিযোগ, তিনি এস আলমের বিষয়ে অনুসন্ধান কাজে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগোতে বলেছেন। তাঁর কথা না শোনায় পুরো তদন্ত দলকে বদলি করা হয়েছে। এ নিয়ে আরও তিন-চারজন কর্মকর্তা নেপথ্যে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। দৃশ্যত এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এস আলম গ্রুপ অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ ইউনিট এস আলমের পরিবার ও তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ও অর্থ পাচারের ব্যাপকতা এত বড় যে দেশ-বিদেশ থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও অনুসন্ধান একটি জায়গায় নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। তার মধ্যে এ ধরনের হস্তক্ষেপ কাজটি আরও কঠিন করবে।
সিআইডি ইতিমধ্যে এস আলমের বিষয়ে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির কাছে চিঠি দিয়েছে। তবে গ্রুপটি এখনো কোনো চিঠির জবাব দেয়নি। সিআইডির অনুসন্ধান কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি দেখে এই বিতর্কিত ধনকুবেরের অর্থ পাচার তদন্তের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন তাঁরা।
সিআইডির মুখপাত্র ও বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান অবশ্য এ বিষয়ে বলেছেন, অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাঁর কথায়, অনুসন্ধান কর্মকর্তা বদলি হওয়ায় অন্য কর্মকর্তাকে কার্যক্রম বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা স্বাভাবিক।
সিআইডি প্রাথমিকভাবে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। গ্রুপটির কর্ণধার সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং দুই ছেলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপে অর্থ পাচার করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাচার করা এই বিপুল অর্থ দিয়ে তাঁরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ কেনা ছাড়াও ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। তাঁদের পাচারকৃত অর্থে সিঙ্গাপুরে ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভুয়া নথি তৈরি, জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নামে-বেনামে ছয়টি ব্যাংক থেকে নেওয়া ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান (শেল কোম্পানি) খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এস আলম ও তাঁর পরিবারসহ তাঁদের সঙ্গে যুক্ত অন্যদের সহযোগিতায় এ বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে এই বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দেশের অর্থনৈতিক খাতের স্বচ্ছতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের চাপে তদন্ত কার্যক্রম সফল হতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।