নেত্রকোনায় অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাবেক অধ্যক্ষ কারাগারে
অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলার 'পূর্বধলা হোসাইনিয়া ফাযিল মাদ্রাসার সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান খানকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে হাবিবুর রহমান খান নেত্রকোনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চাইতে গেলে বিচারক মো. শাহজাহান জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শাহজাহান মামলাটির চার্জশিট আমলে নিয়ে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, হাবিবুর রহমান খান পূর্বধলা হোসাইনিয়া ফাযিল (স্নাতক) মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল যোগদান করেন। নিয়োগ পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকারী হিসেবে মাদ্রাসার তৎকালীন ১১ জন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি তাকে নিয়োগদানের সুপারিশ করেন। তিনি দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ এবং ফাযিল ও কামিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যক্ষ পদে বিধি মোতাবেক শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়।
সে মোতাবেক ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেতন ভাতা ও জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নির্দেশিকা-২০১৩’ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইনডেক্সধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের সমপদ/সমস্কেলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা উচ্চতর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ নীতিমালার পরিশিষ্ট ‘ঘ’ তে বর্ণিত শিক্ষাগত যোগ্যতা (শ্রেণি/বিভাগ) প্রযোজ্য হবে না। সেক্ষেত্রে তাদের নিয়োগকালীন শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য হবে। বিধি মোতাবেক আসামি মো. হাবিবুর রহমান খানের দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য এবং গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগ যথাযথ মর্মে প্রতীয়মান হয়।
আসামি মো. হাবিবুর রহমান খান, মো. আব্দুল মালেক ও মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক কর্তৃক ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্বাস ভঙ্গ করে জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ড তথ্য সৃজন করে জেলা পরিষদ নেত্রকোনা কর্তৃক প্রদত্ত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৭.৯৩ টাকা (ভ্যাট ব্যতীত), টিউশন ফি ৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৪২ টাকা, পূর্বধলা হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ তহবিল ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭৪৮ টাকা ও সরকারি বেতন ভাতা প্রায় ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৪০ টাকাসহ সর্বমোট ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭ দশমিক ৯৩ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অপরাধ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আদালত।
২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন তিনি। পরে সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার পর থেকে তিনি মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়োগ জালিয়াতি, দুর্নীতি ও মাদ্রাসার তহবিল থেকে ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭ দশমিক ৯৩ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এসব অভিযোগে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি তাকে মাদরাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে পূর্বধলা হোসাইনিয়া ফাযিল (স্নাতক) মাদরাসায় মো. শহিদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অফিস সহকারী মো. আশরাফুজ্জামান আকন্দ গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়োগ জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান খানের বিরুদ্ধে নেত্রকোনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি তারিখে মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল মালেক বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধেও উল্লেখিত একই তারিখে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। অথচ তিনি মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালন করছেন ।
এমএসপি