এক সাঁকো দিয়ে ৫ ইউনিয়নের পারাপার, প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা
পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা একটি সাঁকো। সেই সাঁকোটি নির্মিত হয়েছে স্থানীয় দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বেচ্ছায় অর্থ দানের টাকায়। নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন পার হতে হয় লেংগুটিয়া, শ্রিপুর, জাংগালিয়া, গোপালপুর, আলিমাবাদসহ ৫ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ১০ নং আলিমাবাদ ইউনিয়নসহ ৫টি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম কাজির চর খালের উপর নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ শত শত মানুষ পারাপার হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেও একটি ব্রিজের ব্যবস্থা করতে পারেনি এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। দুই পাড়ের গ্রামবাসী মিলে কোনো ভাবে যাতায়াতের জন্য বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করেন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের সময় কাজিরচর খালটিতে প্রবল স্রোতধারা প্রবাহিত হবার কারনে সাঁকো ভেঙে যায়। তখন বর্ষামৌসুমে আর সাঁকো নির্মান করা সম্ভব হয়না বলে পার হতে হয় ডিঙ্গি নৌকায়।
বর্ষা কমে এলে আবার গ্রামবাসী মিলে কোনো ভাবে জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করে সাঁকো। এভাবে চলছে বছরের পর বছর। ফলে বিভিন্ন সময় বাঁশ ভেঙে খালে পড়ে যাওয়াসহ ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা ঘটে। একাধিকবার পারাপারে ঘটেছে শিশু শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনাও।
জানা যায়, এই সাঁকো পার হয়ে শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়, আলিমাবাদ ফাজিল মাদ্রাসা, পাতাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আসমানীয়া ডিগ্রি মাদ্রাসা সহ এলাকার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নূরানী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার শত শত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ নিয়মিত আসা যাওয়া করে।
এ বিষয়ে কাজিরচর গ্রামের তরিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে আলিমাবাদ মাদ্রাসাসহ আশপাশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক কর্মচারী ও এখানকার একমাত্র বড় বাজার মাঝকাজী বাজারে আসা অসংখ্য ক্রেতা-বিক্রেতা ও বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন যাতায়াত করে। কিন্তু এই সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাঁকো পারাপারে অনীহা প্রকাশসহ বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাও অনেকাংশে কমে গেছে।
একই গ্রামের একজন শিশু শিক্ষার্থী হাসানাইনের মা হাজেরা বেগম বলেন আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের সাঁকো পার করে দিয়ে মাদ্রাসায় পাঠাই ছুটির সময় হলে আতঙ্কে থাকি, আবার সাঁকোর কাছে এসে বসে থাকি ছেলে মেয়ে আসলে পার করে নেই। হাজেরা বলেন জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারায় যেন আমাদের এখানে একটি ব্রিজ হয় আমাদের ছেলে মেয়েরা নির্বিঘ্নে স্কুলে যেতে আসতে পারে, আতঙ্ক মুক্ত থাকতে পারি।
আলিমাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক বাবুল বয়াতি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের যে উন্নয়নের ধারা চলমান রয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় কাজীরহাট বাজার সংলগ্ন কাজির চর খালের উপর দ্রুত একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হয় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এই ব্রিজটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ, স্থানীয়দের স্বেচ্ছায় দেওয়া বাঁশ, গাছ ও টাকার সহায়তায় এই নড়বড়ে সাঁকো ব্যাবহারে প্রতিবছরই কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি ঘটে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সবুজ হাওলাদার বলেন আমার নির্বাচনীয় এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের এই সাঁকোটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে আলিমাবাদ ইউনিয়নসহ মেহেন্দীগঞ্জের ৫ টি ইউনিয়নের লোক যাতায়াত করে। আর প্রতি বছরই সাঁকো ভেঙ্গে পড়ে পথচারীরা গুরুতর আহত হয় এবং প্রানহানির মত ঘটনা ঘটে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মান করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।
১০নং আলিমাবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলাম জানান, এখানে ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন (এলজিইডি) জানান, সাঁকোর সমস্যার বিষয় আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিষ্ট দিয়েছি এই সাঁকোটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা জেনেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্রিজ নির্মাণের চেষ্টা করা হবে।
/এএস