এমপির বাসভবন ও কার্যালয়ের সামনে দুইটি মরণ ফাঁদ
বরগুনা সদর রোড। যার পূর্বদিকে পুরাকাটা লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ কয়েকটি বাসস্ট্যান্ড। পশ্চিম দিকে রয়েছে বরগুনা নদীবন্দর, বাস ও মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডসহ বড়ইতলা ফেরিঘাট। তাই ব্যস্ত এই সড়কটির উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চলাচল। এই সড়কের পশ্চিম দিকে পাশাপাশি অবস্থিত বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বাসভবন ও কার্যালয়।
সম্প্রতি সংসদ সদস্যের ওই বাসভবন ও কার্যালয় সংলগ্ন দুই লেনের সড়কে জেব্রা ক্রসিং থাকার পরও নতুন করে দুটি স্পিড ব্রেকার তৈরি করা হয়েছে। তবে তাতে কোনো প্রকার রং কিংবা চিহ্নিত করার কোনো সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি। ফলে দিনের বেলায় কিছুটা রক্ষা পেলেও প্রতি রাতেই এই স্পিড ব্রেকার দুটি টপকাতে গিয়ে দেখে-না দেখে, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় কম-বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যে এখানে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা স্পিড ব্রেকার চিহ্নিত করার উদ্যোগ কিংবা অপসারণের দাবি তুলেছেন।
মো. নিশাত নামে এক মোটরসাইকেলচালক বলেন, ‘এমপির বাসা তাই এখানে না লাগলেও দুইটা স্পিড ব্রেকার দিয়ে রাখতেই হবে। অথচ এতে যে বিপদ বাড়ছে সে খবর কে রাখে। দুই দিন আগে রিকশা থেকে পড়ে এক মেয়ের দাত ভেঙে গেছে। গতকাল এক বৃদ্ধ ডিমের গাড়িসহ পড়ে গেছে। তার সব ডিম ভেঙে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল নেওয়া হয়েছে। পরে ফেসবুকে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে সেখানে পাথরের গুড়া দিয়ে গেছে সংশ্লিষ্টরা। যা স্লিপ কেটে গাড়ি ও চালকদের আরও বিপদ বাড়িয়েছে। তাই এই মরন ফাঁদ স্পিড ব্রেকারগুলো ভেঙে ফেলার দাবি সাধারণ চালকদের।’
বুধবার রাতে দুর্ঘটনার শিকার হয় সদরের ডালভাঙা গ্রামের বৃদ্ধ রিকশাচালক মুজিবর রহমান। বর্তমানে তিনি বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন আছেন।
মুজিবরের শ্যালক শুক্কুর মিয়া বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় দুলাভাই না দেখে এমপি সাহেবের অফিসের সামনে স্পিড ব্রেকারের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পা ভেঙে ফেলেছেন। খবর পেয়ে তাকে বরগুনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বরিশালে স্থানান্তর করেন।
মুঠোফোনে আহত মুজিবুর বলেন, ‘এখানে স্পিড ব্রেকার আছে বোঝার উপায় নাই। অন্ধকারে এটির কারণে আরও দুর্ঘটনা হবে। আমি গরিব মানুষ, রিকশা চালিয়ে পেট বাঁচাই। এখন কীভাবে চিকিৎসা করব, কে দেবে এত টাকা।’
ওই এলাকার চায়ের দোকানদার বারেক বলেন, স্পিড ব্রেকারগুলো দেওয়ার পর থেকেই অনেক চালক না জেনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। বিশেষ করে রাতে বেশি দুর্ঘটনা হয়। যার শব্দ পেয়ে আমরা দৌঁড়ে গিয়ে তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করি। প্রতিদিন ৩-৪ টা ঘটনা ঘটেই।
স্থানীয় সাংবাদিক ফসল পাটোয়ারী বলেন, ‘সংসদ সদস্যের বাসভবনের সামনের সড়কের দুটি স্পিড ব্রেকারে কোনো রং দেয়নি। যেহেতু ওখানে নতুন স্পিড ব্রেকার দেওয়া হয়েছে, এটা সম্বন্ধে অনেক গাড়ি চালকের ধারণা নেই। তাই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।’
আরেক সাংবাদিক রুদ্র রুহান বলেন, ‘আমি নিজেই একদিন খেয়াল করতে পারিনি। উচ্চলাফ দিয়ে কোনোমতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করেছি। তখনই রং দিতে অনুরোধ করেছিলাম।’
আইনজীবী তপু রায়হান বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে অপরিকল্পিতভাবে স্পিড ব্রেকার দেওয়ার বিধান নেই। দিক নির্দেশক চিহ্ন এবং পথচারীদের পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়ের বাইরে সড়কে শুধু র্যাম্বেল স্ট্রেট (আধা ইঞ্চি উঁচু বিট এক সঙ্গে ছয় থেকে আটটি) থাকতে পারে। বিপজ্জনক ভাবে স্পিড বেকার বসানো মানে শুধু গাড়ির ক্ষতি না, এর মাধ্যমে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে কয়েকগুণ দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।’
এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু জানান, এখানে স্পিড ব্রেকার দুটি দেওয়ার আগেও কয়েকটা দুর্ঘটনা হয়েছে, তাই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে রং করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বরগুনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের চাপেই এগুলো বসাতে হয়। এতে আমরা দায়ী নই।