‘স্বপ্নেও ভাবি নাই মোগোও একদিন ঘর ওইবে, জমি ওইবে’
‘গরিব মানুষ, ঘরবাড়ি, পোলা-মাইয়া কিছু নাই। আছে এউক্কা ভ্যানগাড়ি। পঙ্গু দেইক্কা হেও চালাইতে পারি না। বউ ঠেইল্যা স্কুলের সামনে দিয়া আয়, বইয়া ঝালমুড়ি বেঁচি। হেতে কী আর জীবন চলে। রাইতে ঘুমাই রাস্তার পাশে। স্বপ্নেও ভাবি নাই মোগোও একদিন ঘর ওইবে, জমি ওইবে। জীবনে কেউ কিছুই দেয় নাই। শেখ হাসিনা ঠিকই জমিও দেতেছে, ঘরও দেতেছে। এ খুশির কতা কইয়া শেষ করতে পারমু না।’
কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা শহরের গগন স্কুলের পাশের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আবু সালাম। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে জীবনে কিছুই করতে পারেননি তিনি। নিঃসন্তান সালামের কোনো ঘরবাড়িও নেই। স্ত্রীকে নিয়ে গগন স্কুলের সড়কের পাশে একটি ঝুপড়িতে থাকেন তিনি।
রবিবার (১৯ মার্চ) দুপুরে আবু সালাম ও তার স্ত্রী শাহিদা বেগমের সঙ্গে দেখা হয় বরগুনা জেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সামনে। এসময় তাদের হাতে একটি দলিল দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘গৃহহীন দেইক্কা সরকার আমাগো জমিসহ আশ্রয়নের ঘর দেবে। জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে আইজ মোগো এই হানে ডাকছিল। সবকিছু ঠিক হইয়া গেছে। এখন ঘরে ওডার অপেক্ষায় আছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সালাম ছাড়াও বরগুনায় আরও ৫৫২ জন গৃহহীনকে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ২ শতাংশ জমিসহ ঘর দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে এসব সুবিধাভোগীদের জমির দলিল রেজিস্ট্রির কার্যক্রম চলছে।
বরগুনা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সামনে কথা হয় সুবিধাভোগী আরও কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের মধ্যে সুফিয়া নামের একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা বলেন, ‘আমি বিধবা মানুষ। ঘরবাড়ি নাই। আছে একটা মাইয়া। কপাল! সেও বিধবা হইয়া গেছে। মানুষের বাড়িতে থাহি। সরকার ঘর দিতাছে। মাইয়া লইয়া এহন নিজেগো ঘরে থাকতে পারমু।’
সুবিধাভোগী শিল্পী ও উত্তম চন্দ্র দাস দম্পতি বলেন, ‘নিজেদের জমিজমা না থাকায় আমরা শহরের হাসপাতাল সড়কে রাস্তার পাশে ঘর তুলে থাকতাম। সরকারি উচ্ছেদ অভিযানে তাও হারিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার নিরাশ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সরকারিভাবে ঘর দিচ্ছেন। সঙ্গে দুই শতাংশ জমি আমাদের স্বামী-স্ত্রীর নামে দলিল রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন।’
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মুজিববর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না, সে লক্ষ্যে বরগুনা জেলায়ও একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে তালিকা তৈরি করে ঘর নির্মাণের বরাদ্দ পেয়েছি। ঘর নির্মাণ করছি। আশা করি যে আমাদের বামনা উপজেলাসহ প্রতিটি উপজেলাই ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বরগুনায় তৃতীয় পর্যায়ের অবশিষ্ট ও চতুর্থ পর্যায়সহ মোট ৫৫২টি ঘর জমিসহ হস্তান্তর করবেন। তার মধ্যে বামনাতে ৯২ জন ঘর পাবেন এবং বামনাকে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।’
এসজি