লঞ্চের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে কীর্তনখোলা নদী
বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলো প্রতিদিন যাতায়াত পথে দূষিত করছে নদী। এ ছাড়া বরিশাল নৌ-বন্দরে প্রতিদিন লঞ্চ নোঙর করার পরে যাত্রীদের ব্যবহারকৃত বিভিন্ন খাবারের প্লাস্টিক, পলিথিনের প্যাকেটসহ নানা বর্জ্য লঞ্চ ধুয়ে ফেলা হচ্ছে কীর্তনখোলায়। এতে দূষিত হচ্ছে মিঠা পানির নদী কীর্তনখোলা। তবে লঞ্চ স্টাফদের দাবি, লঞ্চের কোনো বর্জ্য নদীতে ফেলা হয় না।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল নৌ-বন্দরে সরেজমিনে দেখা যায়, লঞ্চের পাশেই পানিতে ভাসছে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের প্যাকেটসহ পলিথিন জাতীয় বর্জ্য। এ ছাড়া লঞ্চের ডেকে পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে কীর্তনখোলায়।
এদিকে পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পরে লঞ্চে যাত্রী কম হলেও এখন নিয়মিত বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে তিনটি লঞ্চ যাতায়াত করে। এ ছাড়া বরিশালের অন্যান্য উপজেলা হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ থেকে ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরে প্রায় ২০টি লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিদিনি এতে যাতায়াত করেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এ লঞ্চগুলোর ময়লাও এই নদীতে ফেলা হয় বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের।
পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির সদস্য কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘প্রতিদিন এভাবে কীর্তনখোলায় লঞ্চের বর্জ্য ফেলা হলে কীর্তনখোলা তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে। জলবায়ুতে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে বিষাক্ত কার্বনের মাত্রা। ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এভাবে নদীর নাব্যতা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকলে আস্তে আস্তে নদী ভরাট হয়ে যাবে। এতে পরিবেশ দূষণ বাড়বে ব্যাপক হারে। তাই কর্তৃপক্ষকে এখনই সজাগ হতে হবে।’
বিডি ক্লিন বরিশাল সদর উপজেলার সমন্বয়ক জাহিদ এরফান বলেন, ‘আমরা পোর্ট অফিসারের সঙ্গে বসে এই বিষয়ে মিটিংও করেছি। কিন্তু তারপরেও তেমন কোনো সচেতনা দেখতে পাইনি। বরাবরের মতোই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ময়লাগুলো নদীতে ফেলছে। এতে আমাদের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ওই প্লাস্টিকের বর্জ্যের ছোট টুকরোগুলো মাছের পেটে যায়। এতে মাছের প্রজননের ক্ষতি হয়, অনেক সময় মাছ মরে ভেসে উঠে। আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে যত দ্রুত সম্ভব লঞ্চের বর্জ্য নদীতে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে নেওয়া উচিত।’
অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের স্টাফ মো. সুমন বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা জমা করে পলিথিনের প্যাকেটে করে বড় ডাস্টবিনে রাখা হয়। সেখান থেকে সকালে এসব বর্জ্য বাইরের লোক আইসা নিয়ে যায়। বর্জ্য আমরা নদীতে ফালাই না।’
পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নৌ-বন্দরের সামনে ফাঁকা স্থানে আশপাশের ফুচকা-চটপটি, চায়ের দোকানসহ টং-দোকানিরা রাতের আঁধারে এসে বর্জ্য ফেলে যায়।’
ঢাকাগামী লঞ্চযাত্রী মো. শিহাব বলেন, ‘লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নেই। রাতে লঞ্চ ঘুরলে দেখা যাবে ডাস্টবিনের চেয়ে লঞ্চের মেঝেতে ময়লা বেশি। এ ছাড়া যাত্রীদের সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। যেন সবাই ময়লা একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখে।’
জেলে মো. হানিফ বলেন, ‘এই নদীতে আগে জাল ভইরা মাছ পাওয়া যাইত। এহন জালে পলিথিন আর বোতল উঠে। আগের মতো আর কীর্তনখোলায় মাছ পাওয়া যায় না। ময়লার কারণে মাছ কমছে আর নদীর গভীরতা কমছে।’
নদী দূষণের ফলে জলবায়ু বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে বরিশাল নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নদী দূষণ যাতে না হয় সেজন্য বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়লে যেন ওই ময়লাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। তবে বেশি যদি সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায় এবং সবার সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করা যায় তাহলে এটি প্রতিরোধ করা খুবই সহজ হবে।’
এসজি