দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
বরিশালের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নীরব প্রতিযোগিতা
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-৫ আসনে ইতিমধ্যে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে নিরব প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়ও চলছে কানাঘুষা। এই আসনটি ধরে রাখতে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অসংখ্য নেতা দলের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃণমূলে মাঠ গোছাচ্ছেন নিজেদের মতো করে। তার মধ্যে আবার আলোচনায় আছেন তরুণ নেতা-কর্মীরাও। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগরে অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কাজে লাগিয়ে আবার বিএনপির নেতা-কর্মীরাও নতুন ছক আঁকার চেষ্টা করছেন। তবে অনেকে মনে করেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ছাড়াও বেশ শক্ত অবস্থা তৈরিতে ব্যস্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
বরিশাল সদর ও সিটি করপোরেশন নিয়ে গঠিত এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম এবারও মনোনায়ন প্রত্যাশী। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। ওই নির্বাচনে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮০ ভোট পেয়েছিলেন তিনি (জাহিদ ফারুক শামীম)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার পেয়েছিলেন ৩১ হাজার ৩৬২ ভোট।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম এমপির পক্ষে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আরেফিন বাবু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগামী ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেই লক্ষে আমাদের মন্ত্রী বর্তমান বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও তিনি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের চতুর্থ মেয়াদের মন্ত্রিসভায়। পূর্ণমন্ত্রী না হলেও প্রায় ৩২ বছর পর এই বরিশাল-৫ আসন থেকে কেউ মন্ত্রী হয়েছেন। আর সেটি হয়েছে সৎ, আদর্শ, গুণী ব্যক্তির কারণেই। তাই এই আসন থেকে আবার মনোয়ন নিয়ে পূর্ণমন্ত্রী হয়ে বরিশাল-৫ আসন তথা বাংলাদেশের জনগণের সেবা করে যাবেন তিনি (কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম)।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অন্যান্যদের মধ্যে মনোনায়নপ্রত্যাশী বরিশাল-৫ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেনের সহধর্মিণী মহানগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সাবেক এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), সদর উপজেলা পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেম্বার সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু।
জেবুন্নেছা আফরোজের ভাষ্য, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকারের ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে পুনরায় আসনটিতে মনোনায়ন প্রত্যাশা করেন তিনি। তবে যাদের রাজনীতিতে কোনো অবদান নেই তাদের সঙ্গে দলীয় মনোনায়নের কোনো সর্ম্পক থাকতে পারে না বলে মনে করেন তিনি।
অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের ভাষ্য, দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি দলীয় আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাসী থেকে ওতোপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন। তাই দল যদি চায় তবে তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে প্রার্থী হবেন।
সাইদুর রহমান রিন্টুর ভাষ্য, তিনি সব সময় আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সব সময় বরিশালের জনগণের পাশে থাকেন। যদি ‘দক্ষিণাঞ্চলের অভিভাবক’ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ চান তবে তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনায়ন চাইবেন।
এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের তরুণ নেতৃত্বে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আলোচনায় রয়েছেন শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়বাত, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সালাহউদ্দিন রিপন ও আরিফিন মোল্লা।
এস এম জাকির হোসেন মনে করেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম পারবে এই দেশের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করতে। তরুণরাই পারবে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে। তাই এ সময় প্রয়োজন তরুণ নেতৃত্ব। তরুণদের প্রচেষ্টা ছাড়া লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।
এদিকে তরুণ ও ক্লিন ইমেজের আওয়ামী লীগ নেতা নেতা হিসেবে বরিশালে সুপরিচিত ব্যক্তি তিনি (এস এম জাকির হোসেন )।
মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেফিন মোল্লা জানিয়েছেন, জম্ম সূত্রে তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তবে বর্তমনে বরিশালে দলীয় কোনো পদে না থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে তার বাবা ও মা ছিলেন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। আজ পর্যন্ত বরিশালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন তারা কেউ জম্ম সূত্রে বরিশালের সন্তান নন বলে দাবি করেন তিনি।
এ আসনটিতে বিএনপির মনোনায়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন- দলের যুগ্ম মহাসচিব চার বারের সাবেক এমপি ও সাবেক সিটি করপোরেশনের মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংরক্ষিত এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মো. রহমতউল্লাহ।
বিএনপি দলীয় সূত্র বলছে, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার । তবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এগিয়ে থাকলেও সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এ সময় গোপন চুক্তির বিনিময়ে মাঠ ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগের কারণেই তাকে সম্প্রতি সময়ে মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ হারাতে হয়েছে।
এ বিষয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি। সিটি নির্বাচনে চুরি নয়, ডাকাতি করে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব দলের প্রার্থীর একযোগে নির্বাচন বর্জন। তবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই মাথা পেতে নেব।’
বিলকিছ জাহান শিরিনের ভাষ্য, বরিশালের বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই দলের আনুগত্য থেকে নিবেদিত হয়ে দুঃসময়েও পাশে ছিলেন এবং এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে বরিশাল-৫ আসনে নিজের যোগ্য হিসেবে মনোনয়ন চাইছেন তিনি।
জাতীয় পার্টির মনোনায়নপ্রত্যাশী যারা রয়েছেন তারা হলেন মহানগর জাপার সদস্য সচিব প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস এবং জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কে এম মতুর্জা আবেদীন।
প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপসের ভাষ্য, জাতীয় পার্টির একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে বরিশালে। তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেলে বরিশাল-৫ আসন থেকে লরতে চান তিনি ।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের মেঝ ভাই মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমও রাজনীতির মাঠ গোছাচ্ছেন। বরিশাল-৫ আসনে ইসলামী দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম একাই মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার দাবি, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে ফেলেছে। বিগত ১৩ বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এবারও ক্ষমতাসীনরা জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চান তিনি (আমির মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম)।
এ ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক আ. ছত্তারও নির্বাচন করার আভাস দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলমান থাকায় ভোটার সংখ্যা আগের থেকে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বর্তমান তালিকা অনুযায়ী- বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৭৯ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫১ জন। এ আসনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৪টি।
এসআইএইচ