ভ্যাট অফিসের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে ঘুষ-চাঁদাবাজির অভিযোগ
বরগুনার ভ্যাট অফিসে কর্মরতদের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে ঘুষ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। শহরের অর্ধশত ব্যবসায়ী এ অভিযোগ তুলেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের সামান্য বেচা-কেনা দিয়ে ঘর ভাড়া, ব্যাংক লোন, এনজিওর কিস্তি দিতেই তারা হিমসিম খাচ্ছেন। এর উপরে ভ্যাট অফিসের চাপে তারা আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে সরকার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত ঘোষণা করলেও বরগুনার ভ্যাট অফিসের কর্মরতরা শহরের প্রায় ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে ও বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে ভ্যাটের নামে ঘুষ নিচ্ছেন। সরকারি কোষাগারে ভ্যাট প্রদানের পরেও অফিসে গিয়ে তাদের আলাদা করে টাকা দিতে হচ্ছে। অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকেও ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
বরগুনা শহরের নজরুল ইসলাম সড়কের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী জাহিদ মিয়া বলেন, আমাকে ১৪ হাজার টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করে জমা দিতে বলা হয়। আমি জমা দেওয়ার পরেও ভ্যাট অফিসের সিপাহী এসএম সালাউদ্দিন আরও ২০ হাজার টাকা অফিস খরচ হিসেবে দিতে হবে বলে বারবার অফিসে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। আমি টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে আমাকে হুমকি দেন।
সাহাপট্টির সৌদিয়া সেনিটারী এন্ড হার্ডওয়ারের স্বত্বাধিকারী মো. আবু জাফর বলেন, আমাকে ৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলার পর আমি টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করি। এর সাথে আরও তিন হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।
সদর রোডের বেলায়েত ষ্টোরের সত্বাধিকারী সবুজ মিয়া বলেন, আমাকে ৬০ হাজার টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করে ভয় দেখিয়ে আমাদের ৪ জন ব্যবসায়ীকে অফিসে ডেকে নিয়ে ২১ হাজার টাকা ঘুষ নেন সিপাহী সালাউদ্দিন। এরপর প্রতি মাসে ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে এক হাজার করে টাকা জমা দিতে বলেন। ঘুষ না দিলে ক্ষতি করার হুমকি দেন।
সদর রোডের ফার্নিচার ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান মামুন ও জাবিদ হোসেন অভিযোগ করেন, সমিতির মাধ্যমে তাদের অনেকগুলো দোকান থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ভ্যাট দেওয়ার নামে উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো রশিদ পাননি।
বরগুনা গার্মেন্টস পট্টির ব্যবসায়ীরাও একই অভিযোগ করে জানান, প্রায় ৫০টি দোকান থেকে তাদের নেতাদের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা করে উঠিয়ে নেয় ভ্যাট অফিস। কিন্তু কয়েকটি দোকান ছাড়া টাকা জমার রশিদ অথবা নিবন্ধনের কাগজ পাননি কেউই।
এ ছাড়াও শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের সামান্য বেচা-কেনা ভ্যাটের আওতায় পড়ে না। তারপরও নিবন্ধন না থাকলেও সবাইকে টাকা দিতে হচ্ছে।
ওই সড়কের রাব্বি ইলেকট্রিকের সত্বাধিকারী মহসিন মিয়া বলেন, সমিতির মাধ্যমে ভ্যাটের নামে দুই হাজার করে প্রত্যেক দোকান থেকে টাকা উত্তোলন করা হলেও আমরা কোনো কাগজ পাইনি।
বৈদ্যুতিক ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন বলেন, কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া ভ্যাট অফিস থেকে সবাইকে চাপ দিচ্ছে। কারও কাছ থেকে দুই হাজার আবার কারও কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা নিচ্ছেন।
বরগুনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সরকারি আইনে যারা ভ্যাটের আওতায় আসবে তারা ভ্যাট দিবে। এর বাইরে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টাকা কেন দিচ্ছে এটা খোঁজ নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরগুনা রাজস্ব (ভ্যাট) অফিসের সিপাহী এসএম সালাউদ্দিন বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। যাদের ভ্যাট দিতে বলা হয়েছে তারা অফিসে এসে বলতে পারে। যা ধার্য্য করা হয়েছে তার বাইরে কোনো টাকা-পয়সা নিচ্ছি না।
এ ব্যাপারে বরগুনা রাজস্ব (ভ্যাট) অফিসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার বক্তব্য দিতে পারব না। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যক্রমের টার্নওভার প্রতি ১২ মাসে ৮০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে নিবন্ধন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের টার্নওভার প্রতি ১২ মাসে ৩০ লক্ষ টাকা অতিক্রম করলে তালিকাভুক্তির আবশ্যকতা উদ্ধুত হয়। নিবন্ধন বা তালিকাভুক্তির অব্যশকতা উদ্ধুত হবার ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে নিবন্ধন বা তালিকাভুক্ত করতে হবে।
এসআইএইচ