বরগুনায় তরমুজ চাষে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়
দেশে যে পরিমাণ তরমুজের চাহিদা তার বড় একটি অংশ আসে উপকূলীয় জেলা বরগুনা থেকে। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলের তরমুজ মিষ্ট হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে বাড়তি চাহিদাও। বরগুনার আমতলীতে তরমুজ চাষ বেশি হয়। আমন ধান কাটার পরপরই পরিবার-পরিজন নিয়ে এই উপজেলার কৃষকরা মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
আমতলীর বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে তরমুজ চাষে কৃষকদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে মাঠের পর মাঠ চাষাবাদ করে তরমুজ বীজ বপনের জন্য গর্ত তৈরি করছেন তারা। এ কাজে সাহায্য করতে ঘরের নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন। অপরদিকে গত বছর তরমুজের ভালো দাম পাওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আমতলীতে তরমুজ চাষের লক্ষমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯০ হেক্টর। এবার উপজেলার আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া ও গুলিশাখালী ও সদর ইউনিয়নে ২ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এই বছর ৫১০ হেক্টর জমিতে বেশি তরমুজ চাষ হবে।
তবে বীজ, কীটনাশক, সারের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তাদের দাবি, সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বীজ, সার, কীটনাশকের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও পাশাপাশি ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে জমি চাষে খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে এই বছর তরমুজের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
আঠারো গাছিয়ার কৃষক নজরুল বলেন, তরমুজ চাষে এবার কৃষকরা বেশি আগ্রহী হওয়ায় সার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। সরকারিভাবে ৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপি সার ১ হাজার ১০০ টাকা হলেও ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দিয়ে তা কৃষকদের ১ হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
হলদিয়ার কৃষক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, বাজারে এক কৌটা (১০০ গ্রাম) বিঘ ফ্যামিলি ৩ হাজার, জাগুয়া ৩ হাজার ২০০ ও এশিয়ান বীজ ৩ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত বছর একই বীজের দাম ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। অপরদিকে ডিজেলের মূল্যও বেশি। সবমিলিয়ে জমি চাষে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তরমুজের উৎপাদনে খরচও বাড়ছে এবার।
এ প্রসঙ্গে বিসিআইসি আমতলী উপজেলা ডিলার সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন, সরকারি দামেই সার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গ্রামাঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় বেশি দামে বিক্রি হতেও পারে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
এদিকে সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন খুচরা বিক্রেতারা। হলদিয়ার টেপুরা বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা সোহাগ বলেন, দুই এক টাকা সবাই কম বেশি নিতে চাইলেও কৃষকরা এখন অনেকটাই সচেতন। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কারও সুযোগই নেই।
আরেক খুচরা বিক্রেতা আঠারো গাছিয়ার শাখারিয়া বাজারের আবুল কাশেম বলেন, সরকারিভাবে সার বিক্রির জন্য যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কৃষকদের কাছে আমি সেই দামেই সার বিক্রি করছি। অন্যদেরকেও পরামর্শ দেই সরকারি দামে বিক্রি করার।
এ ব্যাপারে আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, গত বছর আমতলীতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই এ বছরও কৃষকরা তরমুজ চাষে বেশি ঝুঁকছে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও চাষিদের তেমন কোনো প্রণোদনা দিতে পারছি না। এরপরও এ বছর ৫টি প্রদর্শনী করেছি।
এসআইএইচ