‘এ মাসেই আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা’
ঠান্ডায় হাবুডুবু খাচ্ছে বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। সাধারণত কৃষি ক্ষেত-খামারের কৃষক, হকার, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশা চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে ঠান্ডায় কৃষি কাজ করতে গিয়ে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই এই শীতে বরিশাল অঞ্চলের মানুষকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে চলতি মৌসুমে শীতের তীব্রতা কেন এত বেশি? এ বিষয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর কথা হয় বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ রানা রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে গড় তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গড় অনুপাতে গত ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কম।’
এ ছাড়া ২০২২ সালের প্রথম সপ্তাহ এবং চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় হিসেবে শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কম রয়েছে।
সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বলা যায়, বরিশাল অঞ্চলের তাপমাত্রা গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে কম রয়েছে। কিন্তু মানুষের শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে বেশি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ুর চাপ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে এই বাতাসের গতিবেগ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে চলতি মৌসুমে ৮ থেকে ১০ অথবা ৬ থেকে ৮ কিলোমিটার বেগে ঘণ্টায় উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল বায়ু দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এই কারণেই গেল বছরের তুলনায় শীতের তীব্রতা মানুষ বেশি অনুভব করছে। অন্যদিকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে যার প্রভাব উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ কারণে আকাশ কিছুটা মেঘলা রয়েছে। মেঘলা থাকার কারণে সূর্যের কিরণকাল দিনের দৈর্ঘ্য হিসেবে সম্পূর্ণ পাওয়া যাচ্ছে না। দেখা যায়, কোনো দিন ৩ ঘণ্টা, ২ ঘণ্টা আবার ৪ ঘণ্টা পাওয়া যায়। এজন্য শীতের তীব্রতা একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সূর্যের কিরণকাল মেঘ ও কুয়াশায় বাধার জন্য দিনের আলো পাচ্ছে না ভূ-পৃষ্ঠ। তাই রাতে শীতের তীব্রতা আরও দ্বিগুণ বাড়ে।’
এই কর্মকর্তা আগাম পূর্বাভাস দিয়ে বলেন, ‘চলতি মৌসুমের জানুয়ারি মাসে মধ্যম ভাগে বা শেষের দিকে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বরিশাল অঞ্চলের উপর দিয়ে। সেক্ষেত্রে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা আরও কিছুটা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে বরিশালে গত ৭ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ।’
নৌ চলাচল ও বিমান চলাচলের বিষয়ে সতর্কতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার অনেক অনেক জায়গায় এই ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্তও থাকতে পারে।’
এদিকে বরিশালে ঘন কুয়াশা ৫০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্তও রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তাই ঘন কুয়াশা পড়ার কারণে মানুষের দৃষ্টিসীমা কমে যায়। সেক্ষেত্রে গাড়ি ও নৌ চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে শীতের মৌসুমে সবাইকে আবহাওয়ার সতর্কতা মেনে চলার আহ্বান জানান বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ রানা রুবেল।
এসএন