শবে মেরাজের রাতের বিশেষ আমল
শবে মেরাজের রাতের বিশেষ আমল। ছবি: সংগৃহীত
মহিমান্বিত লাইলাতুল মেরাজ একটি পবিত্র রজনী। মেরাজ আরবি শব্দ, এর শাব্দিক অর্থ ঊর্ধ্বগমন। আরবি রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা হয়ে বোরাকে করে ঊর্ধ্বাকাশ পাড়ি দিয়ে আরশে আজিমে আল্লাহর দিদার লাভ করেন মুহাম্মদ (স.)। একেই ইসলামে মেরাজ বলা হয়।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় আগামী (২৭ জানুয়ারি) সোমবার দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল মেরাজ পালন করবেন মুসুল্লিরা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, রোজা রাখা, নফল নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শবে মেরাজ পালন করেন। এ কারণেই রাতটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।
মুসলমানরা এ মহিমান্বিত রাতটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ আদায়, জিকির-আসকার, দোয়া-দরুদ ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পালন করবেন।
শবে মেরাজের নফল নামাজ ও ইবাদত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ; সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, এ রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেন না, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।
মুসলিমদের ইবাদত পালন করার রাতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রাত হচ্ছে শবে। মেরাজ। এ রাতে আল্লাহর হুকুমে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরশে আজিম পর্যন্ত গমনের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।
তিনি এ রাতে আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। এ কারণেই রাতটি মুসলমানদের কাছে খুবই পবিত্র।
আল্লাহ বলেন, পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি বান্দাকে তার নিদর্শনগুলো দেখানোর জন্য রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যার পরিবেশ পবিত্র, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত-১)
নবুয়তের দশম বর্ষের রজব মাসের ২৭ তারিখ হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ৫০ বছর বয়সে পবিত্র মেরাজ সংঘটিত হয়। এ রাতে আল্লাহর রহমত কামনায় মুসলমানরা মসজিদে, নিজগৃহে কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোরআনখানি, জিকির-আজগার এবং ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে পবিত্র শবে মেরাজ উদযাপন করেন।
এই মেরাজের রাতেই মুসলমানদের জন্য নামাজ ফরজ করা হয়। এ রাতেই প্রতিদিন পাঁচ বার নামাজ আদায় করার বিধান নিয়ে আসেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
এ রাতে হজরত মুহাম্মদ (স.) যে দোয়া করতেন তাতে রজব ও শাবান মাসের বরকত ও পবিত্র রমজান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধির আবেদন ফুটে ওঠে। দোয়াটি তিনি নিজে পড়তেন এবং মুসলিম উম্মাহকে পড়তে বলেছেন।
দোয়াটি হলো- ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান। অর্থ, হে আল্লাহ আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’
রজব ও শাবান মাসে হজরত মুহাম্মদ (স.) এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও। দিনের বেলায় রোজা রাখ। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব, কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব, আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮৪)।