দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা পায় কি ?
ছবি সংগৃহিত
ইসলামে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে সম্মানজনক মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। প্রকৃত শহীদ হলো- যারা তাওহিদের কালেমাকে সমুন্নত করার খালেস নিয়তে আল্লাহর পথে লড়াই করে মারা যায়। আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় যারা নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পার না।’ (সুরা বাকারা: ১৫৪) অন্য এক আয়াতে এসেছে, তারা রবের পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত। (সুরা ইমরান: ১৬৯)
পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকটি মানুষের মৃত্যু অবধারিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর। -(সুরা নিসা, আয়াত, ৭৮)
মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও তা মেনে নেওয়া মানুষের জন্য সহজ হয় না। এর মাঝে সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরগুলো বেদনাহত করে সবাইকে। দুর্ঘটনা কবলিত মৃত্যুর কারণে অনেক সময় প্রিয়জনের লাশ পর্যন্ত দেখতে পারেন না স্বজনরা। পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া প্রিয়জনের লাশ শেষ মুহূর্তে দেখতে না পারার কষ্ট শুধু মৃতের স্বজনরাই অনুভব করতে পারেন।
দুর্ঘটনা-মৃত্যু বেদনাহত করলেও এমন মৃত্যুর বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে সুসংবাদ রয়েছে। তিনি এমন মৃত্যুকে শহিদের মৃত্যু বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামে শাহাদাতের মৃত্যু সব থেকে মর্যাদার।
আবদুল্লাহ ইবনে জাবের রা. তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাবা জাবের রা.-কে তার রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তার কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
তখন মহানবী (স.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ…। (আবু দাউদ: ৩১১১)
জাবের বিন আতিক (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত প্রকার শহীদ রয়েছে। ১. মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ২. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৩ শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত শহীদ। ৪. পেটের রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৫. আগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি শহীদ। ৬. যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায় সেও শহীদ। ৭. সন্তান প্রসব করতে মারা যাওয়া নারীও শহীদ। (মুয়াত্তা মালিক: ৫৫৪, ৮০২, আল মুজামুল কাবির: ১৭৮০, সহিহ কুনুজু সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ: ২৩)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিরাও শহীদি মর্যাদা লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ। তবে, পূর্বশর্ত হলো- মুসলমান হতে হবে। ইসলামে ঈমান ছাড়া শহীদি মর্যাদা লাভ হয় না।
তবে ইসলামের জন্য রক্তদানকারী শহীদের সঙ্গে এভাবে শহীদের মর্যাদা লাভকারীদের পার্থক্য হলো দুনিয়াতে তাদের গোসল ও জানাজা সবই হবে। শহীদদের মতো তাদের গোসল ছাড়া সমাহিত করা হবে না।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শহীদ হলো পাঁচ ব্যক্তি; প্লেগরোগে মৃত, পেটের রোগে মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত এবং আল্লাহর পথে লড়াই করে নিহত ব্যক্তি। (সহিহ মুসলিম: ৫০৪৯)
সাঈদ বিন যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ, যে নিজের পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ, যে তার নিজের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ এবং যে নিজের দীন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সেও শহীদ। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৭৪)