নামাজে সুরা ফাতিহা কেন পড়বেন
ছবি সংগৃহিত
নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। নামাজে সূরা ফাতিহা ইচ্ছে করে ছেড়ে দিলে নামাজ হয় না। তবে ভুলে ছেড়ে দিলে সাহু সিজদা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে সূরা ফাতিহা যেন ছুটে না যায় এদিকে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে হবে।
ফিকহ গবেষকরা এ বিষয়ে একমত যে নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক। হানাফি মাজহাব অনুসারে নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। অন্য মাজহাবে তা পাঠ করা ফরজ। প্রশ্ন হলো, নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক কেন?
বান্দার সর্বোত্তম প্রার্থনা:
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) সুরা ফাতিহার তাৎপর্য বর্ণনা করে বলেন, ‘সুরা ফাতিহা নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন! সুরাটি কোরআনের অলৌকিকত্বের উত্তম দৃষ্টান্ত। যদি পুরো পৃথিবীর সব মেধা, সব জাতি-গোষ্ঠীর সৃষ্টিশীল কবি-সাহিত্যিক, মনোবিদ, নৈতিকতার শিক্ষক ও ধর্মীয় গুরু একত্র হয় এবং তারা এমন একটি বক্তব্য তৈরি করতে চায়, যা বিভিন্ন বর্ণ, শ্রেণি ও স্তরের মানুষের প্রার্থনা হিসেবে যথেষ্ট হবে—যদিও তাদের প্রয়োজন ও প্রত্যাশাগুলো পরস্পর থেকে ভিন্ন এবং যে বক্তব্যের মাধ্যমে তারা নিজেদের ইবাদতে মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারবে, তবে তারা সুরা ফাতিহার চেয়ে উত্তম কোনো ভাষ্য তৈরি করতে পারবে না। কেননা সুরা ফাতিহা সর্বশ্রেণির মানুষের আত্মিক প্রশান্তির জন্য যথেষ্ট।
নামাজের সূরা ফাতিহা পড়া হয় হলো - এ বিষয়ে ধর্মতাত্ত্বিক আলেমরা বলেন, ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও শিক্ষা, পবিত্র কোরআনের মূল ভাষ্য ও নামাজের মূল উদ্দেশ্য সূরা ফাতিহায় বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া সূরা ফাতিহায় বান্দার কাছে আল্লাহর এবং আল্লাহর কাছে বান্দার প্রত্যাশাগুলো ফুটে উঠেছে।
১. ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি নামাজ (সুরা ফাতিহা) কে আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ করে নিয়েছি। (সুরাটির) অর্ধেক আমার জন্য এবং অর্ধেক আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দা তাই পায়, যা সে প্রার্থনা করে।’
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তির নামাজ যথেষ্ট নয়, যে তাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করে না।; (ইবনে হিব্বান, দারাকুতনি)
৩. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো নামাজ পড়ে, যাতে সে সুরা ফাতিহা পাঠ করে না, তার ওই নামাজ (গর্ভচ্যুত ভ্রুণের ন্যায়) অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)
৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজে ভুলকারী সাহাবিকে তার নামাজে এই সুরা (ফাতিহা) পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (বুখারি)
সুতরাং নামাজে সুরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক। এটি নামাজের অন্যতম রোকন। তাইতো নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘এটি ‘উম্মুল কোরআন’। আল্লাহ তাআলা সুরা ফাতিহার মতো কোনো মর্যাদার সুরা তাওরাত ও ইঞ্জিলে নাজিল করেননি। এই (সুরাটিই) হল (নামাজে প্রত্যেক রাকআতে) পঠিত ৭টি আয়াত বিশিষ্ট সুরা এবং কোরআন, যা আমাকে দান করা হয়েছে।’ (নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম, তিরমিজি, মিশকাত)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সঠিকভাবে নামাজ সম্পন্ন করতে সুরা ফাতিহা নামাজের প্রত্যেক রাকাতে তেলাওয়াত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের প্র্যত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।
আমিন