অন্যের গোপন দোষ-ত্রুটি সন্ধান করতে নিষেধ করেছে ইসলাম
ছবি সংগৃহিত
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের সুরা হুজরাতের একটি আয়াতে তিনটি কাজকে হারাম করেছেন। যা সামাজিক রীতি-নীতি ও মানুষের পারস্পরিক অধিকারের সঙ্গে জড়িত। বিষয়গুলো হলো- গিবত করা, কারো দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো এবং ধারণা করা। এগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ কাজ। এর পরিণামও খুবই ভয়াবহ।
মানুষের হাত ধরে দেশ, শহর, গ্রাম, পাড়া, মহল্লার সৃষ্টি হয়। মানুষই এসব কিছুর নিয়ন্ত্রক। মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা, অন্যায়-অবিচার, দুঃশাসন দেখা দিলে দেশ, সমাজ, গ্রামে অশান্তি নেমে আসে। পরস্পর ক্ষতিসাধনে লিপ্ত হলে বিপর্যয়ে ছেয়ে যায় মানুষের জীবনযাপন।
আল্লাহ বলেছেন, তোমরা অন্যের গোপন বিষয় অনুসন্ধান কোরো না। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২) যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে। (সুরা আহযাব, আয়াত: ৫৮)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-র বরাতে এই হাদিসের বর্ণনা আছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, মন্দ ধারণা সবচেয়ে বড় অসত্য। অন্যের গোপন দোষ খুঁজে বেড়িয়ো না, অন্যের ব্যাপারে গুপ্তচরবৃত্তি কোরো না, একে অপরের সঙ্গে (অসৎ কাজে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোরো না, পরস্পরকে হিংসা কোরো না, পরস্পরের বিদ্বেষ কোরো না, একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুতা পুষো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও; যেমন তিনি তোমাদের আদেশ দিয়েছেন।
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো ধারণা পাপ আর তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো এটাকে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা আল-হুজুরাত : আয়াত ১২)
এই আয়াতে মহান প্রভু মানুষের পারস্পরিক হক ও সামাজিক রীতি-নীতি ব্যক্ত করেছেন। এতে তিনটি বিষয়কে হারাম করেছেন। এক. ধারণা; দুই. কোন গোপন দোষ সন্ধান করা এবং তিন. গীবত ; কোন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে শুনলে সে নিজেকে অসহনীয় মনে করতো বা নিজের মনে কষ্ট পেতো।’
এ তিনটি বিষয়ের মধ্যে মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ানো সবচেয়ে মারাত্মক ঘৃণ্য অপরাধ। এ তিনটি বিষয়ের প্রথমটি হচ্ছে-
> ধারণা
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কারও আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা পোষণ করা ছাড়া মৃত্যুবরণ করা উচিত নয়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
২. অন্য হাদিসে এসেছে ‘আমি আমার বান্দার সাথে তেমনি ব্যবহার করি, যেমন সে আমার সম্বন্ধে ধারণা রাখে। এখন সে আমার প্রতি যা ইচ্ছা ধারণা রাখুক।’ (মুসনাদে আহমাদ)
এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করা ফরজ এবং কু-ধারণা পোষণ করা হারাম। এমনিভাবে যেসব মুসলিম বাহ্যিক অবস্থার দিক দিয়ে সৎকর্মপরায়ণ দৃষ্টিগোচর হয়, তাদের সম্পর্কে প্রমাণ ছাড়া খারাপ মন্তব্য করাও হারাম। হাদিসে এসেছে-
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা মিথ্যা কথার নামান্তর।’ (বুখারি, মুসলিম)
> দোষ খুঁজে বেড়ানো
এ আয়াতে দ্বিতীয় নিষিদ্ধ বিষয় হচ্ছে, কারও দোষ খুঁজে বেড়ানো। এর দ্বারা নানান ধরনের ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। এ কারণে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর খুতবায় দোষ অন্বেষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন-
১. ‘হে লোক সকল! যারা মুখে ঈমান এনেছো কিন্তু এখনো ঈমান তোমাদের অন্তরে প্ৰবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমদের গোপনীয় বিষয় খুঁজে বেড়াবে না। যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায় আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটির অন্বেষণে লেগে যাবেন। আর আল্লাহ যার ত্রুটি খুঁজে বেড়াবেন তাকে তার ঘরের মধ্যে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।’ (আবু দাউদ)
২. অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমদের গিবত করো না এবং তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না। কেননা যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে নিজ ঘরেও লাঞ্ছিত করে দেন।’ (আবু দাউদ)
৩. হজরত মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি নিজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘তুমি যদি মানুষের গোপনীয় বিষয় জানার জন্য পেছনে লাগো। তাদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে কিংবা অন্তত বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে পৌছে দেবে।’ (আবু দাউদ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পরকে হিংসা কোরো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, অন্যের ব্যাপারে গুপ্তচরবৃত্তি কোরো না, অন্যের গোপন দোষ খুঁজে বেড়িয়ো না, পরস্পরের পণ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।
অন্য আরেকটি বর্ণনায় আছে, তোমরা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কছেদ করো না, একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুতা রেখো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, পরস্পরকে হিংসা কোরো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।
ভিন্ন একটি বর্ণনায় আছে, ‘তোমরা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন কোরো না এবং অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর কেনাবেচা কোরো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,১৪৩)