পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ
জগতের প্রতিটি মুমিন-মুসলমানের সমস্ত আবেগ-অনুরাগ প্রাণোত্সারিত ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসে একাকার হওয়া প্রাণ-মন-মনন আকুল করা দিন আজ। উৎসবের রোশনাইঘেরা ১২ই রবিউল আউয়াল। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পালিত হবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারি রহমাতুল্লিল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাত দিবস বলে চিহ্নিত করা হয়।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শ বছর আগে আইয়ামে জাহেলিয়াতের ঘনঘোর তমসা ছাওয়া ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের সুবহে সাদিকের সময় জাজিরাতুল আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়.।’
তাঁর বাবা আবদুল্লাহ ও মা আমিনা। জন্মের আগেই রাসুল (সা.) তাঁর বাবাকে হারান এবং ছয় বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন।
আরব জাহান যখন পৌত্তলিকতা ও অনাচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, সেই আইয়ামে জাহেলিয়ার সময় মহান আল্লাহ সত্য, ন্যায়, কল্যাণ ও একত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রিয় হাবিবকে অপার রহমত হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে মহান আল্লাহ তাআলা রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। এ কারণে তাঁকে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলা হয়। সারা পৃথিবীর মুসলিমদের কাছে দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মুসলিম উম্মাহ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে উদ্যাপন করে থাকে।
বিনয়, সহিষ্ণুতা, দয়া, সহমর্মিতাসহ সব মানবিক সদগুণের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হিসেবে তিনি ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সর্বকালে সর্বজনস্বীকৃত। ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যবাদিতার জন্য শৈশবেই তিনি ‘আল আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সব নবী ও রাসুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মহানবী (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত পান।
এরপর ২৩ বছর তিনি তৌহিদের বাণী প্রচার করেছেন। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে এবং সমাজে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বেশি বেশি দরুদ পাঠ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-খয়রাতসহ নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করেন। এ ছাড়া রাসুল (সা.)-এর জীবনী নিয়েও আলোচনার আয়োজন থাকবে।
বিদায় হজের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে :‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দিন তথা জীবনব্যবস্থা পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য দিন তথা জীবনব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’
হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পণ্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে স্থান দিয়েছেন। ব্রিটিশ মনীষী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইত। তার আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জন্ম ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত ১২ই রবিউল আউয়াল তথা ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) বিশ্ববাসী বিশেষত মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন। এ উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও সংস্থা নানা কর্মসূচি নিয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শোভাযাত্রা, আলোচনা ও মিলাদ মাহফিল। এ ছাড়া ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, দান–খয়রাতের মতো নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করবেন।