বিপদ দিয়ে আল্লাহ যেভাবে মানুষকে পরীক্ষা করেন
প্রতীকী ছবি
মানুষের ক্ষমতা ও সক্ষমতা খুবই সীমিত। বিপরীতে মহান আল্লাহ সৃষ্টিজগতের ওপর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ফলে জাগতিক জীবনে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণই বান্দার জন্য সার্বিক বিবেচনায় কল্যাণকর। আল্লাহর আশ্রয় বান্দার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
আল্লাহ তাআলা ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে বান্দার পরীক্ষা নেন। কাউকে গুনাহ ক্ষমার উদ্দেশ্যে বা মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যই অসুখ-বিসুখ, মসিবত ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। আবার কাউকে শোকরগুজার কি না কিংবা যথাযথ দায়িত্বশীল কি না দেখার জন্য সুখ দিয়েও পরীক্ষা করেন।
দুনিয়াতে উত্তম হওয়ার কারণ হলো, বিপদে পড়ার কারণে দোয়া, মোনাজাত, কান্নাকাটি ও অক্ষমতা প্রকাশের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে যায় মানুষ। এর মাধ্যমে মানুষ জাগতিক বিভিন্ন অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকেন।
আর আখিরাতে উত্তম হওয়ার কারণ হলো, গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।’ (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত, ১৫৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)। এই সুরার শেষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ধৈর্যকে সাফল্যের নিয়ামকরূপে বর্ণনা করেছেন।
মহামারি ও দুর্যোগে ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে, মনোবল দৃঢ় রেখে, শান্তভাবে পরিস্থিতি উত্তরণ মুমিনের কাজ। বিপদগ্রস্তদের সাহায্য–সহযোগিতা করা, সেবা করা, দান–খয়রাত করা বিপদ-আপদ ও বালামসিবত মুক্তির অন্যতম উপায়।
নবী হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামকে সামান্য অধৈর্য হওয়ার কারণে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাতের আঁধারে উত্তাল সমুদ্রবক্ষে হিংস্র মৎস্য উদরে যেতে হয়েছিল। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে উদ্দেশ করে কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ করো তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়, তুমি মৎস্য-সহচর (ইউনুস আ.)–এর ন্যায় অধৈর্য হয়ো না, সে বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করেছিল।’ (সুরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪৮)।
বান্দার ওপর যত বিপদ-আপদ আসে সব কিছুরই তাৎপর্য থাকে। কিন্তু সব বিষয় আল্লাহ তাআলা বান্দার সামনে প্রকাশ করেন না। যেহেতু বিপদেও কল্যাণ নিহিত থাকে সুতরাং যেকোনো বিপদের সময় এ কথা স্মরণ করে নেবে যে, এতেই আমার জন্য কল্যাণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশান্তি লাভের একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি। আর আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির (সহজ) পদ্ধতি হলো আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে সম্পর্ক করা। আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে সম্পর্ক করলেই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। আর আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে গেলে কোনো বিপদ মানুষকে বিচলিত করবে না।
পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মানুষের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। এ পরীক্ষা ধন-সম্পদের ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে হতে পারে, ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্টের মাধ্যমেও হতে পারে। এমনকি এ পরীক্ষা প্রাণের বিনিময়েও হতে পারে।
এ সকল কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার একমাত্র উপায় হলো সবর তথা ধৈর্য অবলমবন করা আর আল্লাহ তাআলার বিধান মোতাবেক তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকা। তবেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল বিপদ ও মুসিবতে কুরআনের বিধান মেনে নেয়ার তাওফিক দান করুন। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে মাওলার নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অবশ্যই কোনো না কোনো দিক থেকে স্বস্তি রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্যই প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অন্য দিকে স্বস্তি আছেই।’ (সূরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত, ৫-৬) আমিন।