জিলহজ মাসের আমল
মহান আল্লাহতায়ালার রহমত ও নিয়ামত লাভের সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে জিলহজ মাস। এ মাসের প্রথম ১০ দিন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এ মাসে মুসলিম উম্মাহর বিশেষ দু’টি ইবাদত রয়েছে। কোরবানি ও হজ।
৮ জিলহজ থেকে হজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু। ৮ তারিখে মিনা গমন দিয়ে ৯ তারিখে আরাফার প্রান্তরে অবস্থান, সূর্যাস্তের পর মাগরিব-ইশা একসঙ্গে আদায় করে মুজদালিফায় রাত্রি যাপন। ১০ তারিখ সকাল হওয়ার পর মিনায় গিয়ে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে কোরবানি, হলক ও তাওয়াফ। এরপর ১১, ১২ ও সম্ভব হলে ১৩ তারিখ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে হজের কাজ সম্পন্ন হয়।
অন্যদিকে, এই মাসের ১০-১২ তারিখ পুরো মুসলিম উম্মাহ পবিত্র ঈদুল আজহা ও কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও তাঁর সান্নিধ্য লাভ করে থাকে। এসব কারণে এ মাসের প্রথম দশক অতি গুরুত্বপূর্ণ।
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের দিনগুলোকে মহানবী রাসূল (সা.) বছরের শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এ বিষয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন নেই, যার আমল জিলহজ থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।
সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! (সা.) আল্লাহর পথে সংগ্রাম-জিহাদও নয়? জবাবে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জানমাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হলো এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফিরে এলো না, (অর্থাৎ যে শাহাদাতবরণ করেছেন) তার কথা ভিন্ন।’ (বুখারি, হাদিস: ৯৬৯)।
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা ইবনে হাজর আস-কালানি (রহ.) তার বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারিতে উল্লেখ করেছেন, ‘জিলহজের দশকের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণ হলো— এতে সব মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যেমন, সালাত, সিয়াম, সদকা, হজ ইত্যাদি। অন্য কোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না। (ফাতহুল বারি: ২/৪৬০)।
জিলহজ মাসের প্রথম দশকে কী কী নেক আমল করা প্রয়োজন তা জেনে নিই:
নফল ইবাদত
জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিন রোজা না রাখতে পারলেও আরাফার দিনে রোজা রাখা খুবই উত্তম।
আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোজা তার আগের ও পরের বছরের গুনাহ মুছে ফেলবে।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৭৪০)।
আরাফার দিনের আরেকটি আমল হলো— ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির।’ কালিমাটি বেশি বেশি পড়া। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৯২২)।
তাকবিরে তাশরিক
জিলহজ মাসের নবম তারিখের ফজর থেকে তের তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব।
তাকবিরে তাশরিক পুরুষরা শব্দ করে আর নারীরা নীরবে পড়বেন। তাকবিরে তাশরিকটি হচ্ছে- ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস: ৬০৭১)।
আরএ/