ওমরাহ পালনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
এহরাম
প্রয়োজনীয় সাফাই এবং অজু গোসলের পর এহরামের কাপড় পরুন। টুপি মাথায় দিয়ে এহরামের নিয়তে দু’রাকাত নামাজ পড়ুন।
নিয়ত: নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকায়াতায় সালাতিল এহরাম, সুন্নত রাসুলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’ব বাতিশ শরিফাতি আল্লাহু আকবার।
প্রথম রাকাতে সুরা কাফেরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা এখলাস পড়ুন। সালাম ফিরিয়ে এবার টুপি খুলে এভাবেই বসে থেকে যে যার নিয়ত করুন।
ওমরার নিয়ত: হে আল্লাহ আমি ওমরাহ করার নিয়ত করছি। আমার জন্য তা সহজ করে দাও এবং কবুল কর।
এবার অনুচ্চ কণ্ঠ (মহিলারা ফিস ফিসিয়ে) তিনবার তাবলিয়া পড়ুন।
তাবলিয়া: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ‘ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।
মক্কা শরীফে করণীয়
১. মসজিদা হারামে ঢোকার পর যখনই কালো গিলাফে ঢাকা বায়তুল্লাহ নজরে পড়বে তখনই তিনবার বলুন আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এবং সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করুন।
২. হজরে আসোয়াদের বরাবর কালো দাগের একটু আগে এসে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিন। এজতেবা করুন, অর্থাৎ আপনার চাদরের ডান অংশকে ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর রেখে দিন। এখন তাওয়াফের নিয়ত করুন।
নিয়ত: হে আল্লাহ আমি পবিত্র ঘর তাওয়াফের নিয়ত করছি। আমার জন্য তা সহজ করে দাও এবং আমার পক্ষ থেকে সেই সাতপাক তাওয়াফ কবুল করে নাও।
৩. এবার কালো দাগের উপর পা দিয়ে কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে নিম্নের দোয়া পড়তে পড়তে দু’হাত কান পর্যন্ত তলুন (মহিলারা বুক পর্যন্ত) এবং বাম হাত নামিয়ে এনে হজরে আসোয়াদের চুমু খান। দোয়া: বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
৪. এবার ডান দিকে ঘুরে তাওয়াফ শুরু করুন। প্রথম তিন চক্করে রমল করুন। দৃষ্টি মাটির দিকে রাখুন। এ অবস্থায় নিচের দোয়াটি পড়তে থাকুন এবং আরও যা যা দোয়া কালাম পড়তে মন চায় পড়ুন।
দোয়া: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আ শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলাকুল্লি শাইয়্যান ক্বাদির।
৫. রোকনে ইয়ামানি থেকে কালো দাগের (পায়ের দিকে দেখুন) একটু আগ পর্যন্ত নিম্নের দোয়াটি পড়তে থাকুন।
দোয়া: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাছানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাছানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার, ওয়াআদ খিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার, ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন।
৬. এখন এক চক্কর হলো। এবার ৩ নম্বর দোয়া পড়তে পড়তে কালো দাগের উপর পা দিয়ে ইশারায় চুমু খেয়ে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করে আগের মতই শেষ করুন।
৭. সাত চক্কর শেষ করে ইশারায় অষ্টম চুমুটি খেয়ে এজতেবা খুলে কাঁধ ঢেকে মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দু’রাকাত সালাতিল তাওয়াফ (ওয়াজিব) নামাজ পড়ুন।
নিয়ত: নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকায়াতায় সালাতিত তাওয়াফ, ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বা বাতিশ শরিফাতি আল্লাহু আকবার।
প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা এখলাছ পড়ুন।
৮. এবার জম জম কুয়ার কাছে যান। পেট ভরে পানি খান। পানি খাওয়ার সময় নিম্নের দোয়াটি পড়ুন। দোয়া: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী ইলম (জ্ঞান) প্রশস্ত রিজিক, নেক আমল এবং সমস্ত বিমারি হইতে আরোগ্য প্রার্থনা করিতেছি।
৯. জম জম খেয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে হজরে আসোয়াদের বরাবর (কালোদাগ) দাঁড়িয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হজরে আসোয়াদকে ইশারায় নবম চুমু খান।
১০. এবার সাঈ এর জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন। একটু উপরে উঠলেই ক্বাবা শরীফ আপনার নজরে পড়বে। ক্বাবা শরীফের দিকে মুখ করে দোয়ার জন্য হাত তুলে তিনবার বলুন’ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এবং যা মন চায় দোয়া করুন।
১১. দোয়া বাদ ডান দিকে সরে গিয়ে মারওয়া পাহাড়ের দিকে মুখ করে সাঈ শুরু করার স্থানে দাঁড়িয়ে সাঈ এর নিয়ত করুন।
নিয়ত: হে আল্লাহ আমি তোমার জন্য সাফা-মারওয়ার সাঈ সাত চক্করের মাধ্যমে আদায় করার নিয়ত করছি। আমার জন্য ইহা সহজ করে দাও এবং কবুল করে নাও।
১২. স্বাভাবিক গতিতে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন। সবুজ বাতি ও সবুজ খাম্বাদ্বয়ের মাঝখানের জায়গাটি শুধু পুরুষরা দ্রুত গতিতে পার হোন (অন্যেরা দৌড়াচ্ছে দেখুন) এরপর স্বাভাবিক গতিতে চলুন। ৪ নম্বর অনুরুপ দোয়া পড়ুন।
১৩. মারওয়া পাহাড়ের সামান্য উচুতে উঠে ক্বাবা শরীফের দিকে ফিরে থেমে যান। যদিও ক্বাবা শরীফ নজরে না পড়ে। এবার সাফা পাহাড়ের অনুরূপভাবে ১০ নম্বর দোয়া পড়ুন।
১৪. সাফা থেকে মারওয়া এক চক্কর হল। পুনরায় মারওয়া থেকে সাফা হবে দ্বিতীয় চক্কর। এভাবে মারওয়াতে সাত চক্কর শেষ হবে। প্রতিবারেই যথা নিয়মে শেষ করবেন।
১৫. সাঈ এর মাথা মুন্ডনের জন্য নাপিতের দোকানে (সাফার দিকে) চলে আসুন। সম্পূর্ণ মাথা মুন্ডন করাই সর্বোত্তম।
সূত্র: মনসুর আহমেদ চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ইমপেক্ট ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ
আরএ/