জাকাতের হিসাব করবেন কীভাবে
নবীজির (সা.) ঘোষণা অনুযায়ী, রমজানে একটি নফল ইবাদতে একটি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আর একটি ফরজ ইবাদতে মেলে সত্তর গুণ সওয়াব। জাকাত যেহেতু ফরজ ইবাদত, তাই এক হাজার টাকা জাকাত হিসেবে আদায় করা হলে সত্তর হাজার টাকা জাকাত আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায় রমজানে। এ কারণে অনেকেই জাকাত আদায়ের জন্য বেছে নেন পবিত্র রমজান মাস।
যেসব ক্ষেত্রে জাকাত দিতে হয়
জাকাত দিতে হয় স্বর্ণের, রুপার, নগদ সম্পদের, ব্যবসায়িক সম্পদের, জমাকৃত সম্পদের, উৎপাদিত কৃষি ফসলের। চারণভূমিতে চড়ে বেড়ায় এমন গরু, ছাগল, উট, দুম্বা যখন জাকাত ফরজ হওয়ার পরিমাণে হবে তখনও জাকাত দিতে হবে। ব্যাংকে জমাকৃত যেকোনো ধরনের টাকা জাকাতের সম্পদ হিসাবে গণনায় আসবে। এমনকি ফিক্সড ডিপোজিট হলেও মূল জমাকৃত টাকার জাকাত দিতে হবে। হজের জন্য জমাকৃত টাকার জাকাত দিতে হবে। তবে হজ কর্তৃপক্ষ বা হজ এজেন্টের কাছে টাকা জমা দেওয়া হয়ে গেলে অফেরতযোগ্য টাকার জাকাত লাগবে না।
যারা শেয়ার ব্যবসা করেন তারা শেয়ারের মার্কেট ভ্যালুর ওপর জাকাত দেবেন। বীমা থেকে যখন অর্থ পাওয়া যাবে তখন বিগত বছরসহ জাকাত আদায় করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া, চুরি বা ছিনতাই হয়ে যাওয়া সম্পদে জাকাত নেই। ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন ঋণেরও জাকাত নেই। তবে এসব ফেরত পেলে শুধু সংশ্লিষ্ট বছরের জাকাত দিতে হবে। বিগত বছরের জাকাত দিতে হবে না।
বাড়িওয়ালার কাছে অগ্রিম ভাড়া হিসাবে জমাকৃত টাকার, দোকানের জন্য জামানতের টাকার জাকাত দিতে হবে। ব্যবসার সম্পদের ক্ষেত্রে জাকাত গণনায় কারখানা বা দোকানের মেশিনারিজের মূল্য ধরা হয় না। এমনিভাবে দোকান বা অফিস ডেকোরেশনের জিনিসপত্রের মূল্য জাকাতের হিসাবে আসে না। এসব ক্ষেত্রে শুধু কোম্পানি, কারখানা বা দোকানের আয় জাকাতের সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে। কারখানার কাঁচামাল যেমন প্রেসের কালি, বস্ত্রকলের তুলা-সুতার মূল্যের জাকাত দিতে হবে।
বাড়ি ভাড়া দিলে শুধু ভাড়া থেকে আয়ের ওপর জাকাত দিতে হবে। বাড়ির মূল্যের ওপর জাকাত নেই। গাড়ি ভাড়ার ব্যবসায়ীরা গাড়ি থেকে আয়ের ওপর জাকাত দেবেন। গাড়ির মূল্যের ওপর জাকাত নেই। তবে যারা গাড়ি বিক্রির ব্যবসা করেন তারা গাড়ির মূল্যের ওপর জাকাত দেবেন। এমনিভাবে ফ্ল্যাট ও প্লট ব্যবসায়ীরাও ফ্ল্যাট ও প্লটের মূল্যের ওপর জাকাত দেবেন। নিজে ব্যবহারের জন্য প্লট কেনার জন্য টাকা জমা করলে বা কিস্তি দিলে যেহেতু তখনও সেই টাকার মালিক নিজেই থাকে তাই তা জাকাতের সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে। তবে জমি ক্রয় চূড়ান্ত হয়ে গেলে সেই জমির মূল্যের জাকাত দিতে হবে না।
মুরগির ফার্ম থেকে ডিম উৎপাদন উদ্দেশ্য হলে ডিমের মূল্যের জাকাত দিতে হবে। মুরগির মূল্যের জাকাত দিতে হবে না। মুরগি এ ক্ষেত্রে কারখানার মেশিনারিজের মতো গণ্য হবে। তবে বয়লার ফার্ম হলে যাতে মুরগির বাচ্চা বড় করা হয় তাতে উৎপাদিত-পালিত মুরগির বাচ্চার মূল্যের জাকাত দিতে হবে। ফিসারিজের জন্য ভাড়াকৃত বা ক্রয়কৃত জমি বা পুকুরের মূল্যের জাকাত দিতে হবে না। তবে বিক্রিত মাছের মূল্যের ওপর জাকাত আসবে।
যেসব ক্ষেত্রে জাকাত দিতে হয় না
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ব্যবহৃত কাপড়, ঘরোয়া ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র যেমন ফ্রিজ, এসি, ফ্যান, কম্পিউটার, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি, থাকার জন্য বাড়ি, আগামী ফসল না পাওয়া পর্যন্ত পারিবারিক খাবারের জন্য জমাকৃত ধান, গম, চাল, লেখাপড়ার জন্য বইপত্র এবং কৃষি সরঞ্জামাদি যেমন ট্রাক্টর, মাড়াই মেশিন ইত্যাদিতে জাকাত ফরজ হয় না।
জাকাতের সম্পদ থেকে যা বিয়োগ হবে
ঋণের টাকায় জাকাত ওয়াজিব হয় না। বরং জাকাতের হিসাব করার সময় জাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাব থেকে ঋণের টাকা বা সম্পদ বিয়োগ হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হলে শুধু আগামী এক বছরে প্রদেয় ঋণের টাকা বিয়োগ হবে। ব্যবসার সম্পদে জাকাত হিসাব করার সময় মহাজন বা মাল সরববাহকারীকে প্রদেয় টাকা বা সম্পদ বাদ যাবে। ডায়মন্ডের অলঙ্কার ব্যবহার করলে জাকাত দিতে হয় না। তবে ডায়মন্ডের ব্যবসায়ীরা ডায়মন্ডের মূল্যের জাকাত দেবেন।
ব্যবসায়িক সম্পদে ২.৫ ভাগ জাকাত দিতে হয়। ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোনো বস্তু ক্রয় করার পর তা ব্যক্তিগত ব্যবহারে নিলে তার জাকাত দিতে হবে না। আবার ব্যক্তিগত ব্যবহারের ইচ্ছায় ক্রয়কৃত কোনো বস্তু নিয়ে ব্যবসা করার ইচ্ছা করলেই তা ব্যবসায়িক বস্তু হবে না। যখন তা বিক্রি করবে তখনই তা ব্যবসায়িক বস্তু হিসেবে গণ্য হবে। কোনো বস্তু বা অলঙ্কার বন্ধক রেখে টাকা উঠালে বন্ধকি বস্তু জাকাতের হিসাবে আসবে না। প্রভিডেন্ট ফান্ডে যা বাধ্যতামূলকভাবে কেটে নেওয়া হয়, এর জাকাত দিতে হয় না। যদি নিজের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত টাকা কাটানো হয় বা জমা রাখা হয় তাহলে অতিরিক্তের ওপর জাকাত আসবে।
মোট জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে যা বিয়োগ দেওয়ার থাকে তা বিয়োগ করে মোট প্রদেয় জাকাতের সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ ভাগ টাকা বা সম্পদ সারা বছরে জাকাত দিতে হবে।
এসএ/