জাকাত কারা দেবেন, কাকে দেবেন
জাকাত ইসলামের অন্যতম বিধান। তবে সবার উপর জাকাত ফরজ নয়। উদ্বৃত্ত সম্পদের একাংশ জাকাত হিসেবে দেওয়া হয়। যারা এ উদ্বৃত্তের মালিক হন, তাদের উপরই শুধু জাকাত ফরজ হয়। এটি বান্দার হক।
জাকাত কারা দেবেন
শরিয়তের নির্দেশনা হলো–স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন সম্পদশালী মুসলিম নর-নারী চন্দ্র বছরান্তে তার জাকাতযোগ্য সম্পদের চল্লিশ ভাগের একভাগ তথা ২.৫ শতাংশ টাকা বা সম্পদ গরিব বা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করবেন। এটিই জাকাত। ইসলামের দৃষ্টিতে সাহেবে নিসাব বা সম্পদশালী হলেন যার কাছে ঋণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্রের অতিরিক্ত স্বর্ণ, রূপা, নগদ টাকা ও ব্যবসায়িক সম্পত্তির কোনো একটি বা সব কটি রয়েছে যার সমষ্টির মূল্য সাড়ে সাত তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম) স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম) রুপার সমান হয়, তিনিই সম্পদশালী। সম্পদশালী ব্যক্তি জাকাত নিতে পারেন না, তার পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে হয়, বছরান্তেও সম্পদশালী থাকলে জাকাত দিতে হয়।
জাকাতের টাকা হিসাব করার ক্ষেত্রেও যে কোনো রেটে হিসাব করতে পারেন। তবে মধ্যম রেটে হিসাব করা উত্তম। উচ্চ রেটে হিসাব করলে অবশ্য গরিবরা বেশি পাবে।
জাকাত কাকে দেবেন
জাকাত প্রাপ্যদের তালিকা দেওয়া হয়েছে কোরআনে। গরিব, নিঃস্ব ব্যক্তি, জাকাত আদায় ও বণ্টন ব্যবস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথের পথিক এবং অভাবী মুসাফির জাকাতের অর্থ ও সম্পদ গ্রহণ করতে পারে।
নিকট আত্মীয়দের জাকাত দেওয়া উত্তম। তবে নিজের সন্তান বা তার অধস্তনকে কিংবা মা-বাবা বা তাদের ঊর্ধ্বতনকে, স্বামী-স্ত্রীকে জাকাত দেওয়া যায় না। এমনিভাবে রাসুলের বংশের কেউ জাকাত নিতে পারেন না।
জাকাত দেওয়ার সময় মনে মনে জাকাত দেওয়ার নিয়ত বা ইচ্ছা করলেই জাকাত আদায় হয়ে যাবে। জাকাত গ্রহিতাকে ‘এটা জাকাতের সম্পদ’ জানানোর প্রয়োজন নেই। অভাবীদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ করে সারা বছরই জাকাত দেওয়া উচিত। বরং অত্যন্ত প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসায় তা রমজানে দানের চেয়ে কম হবে না। এ লক্ষ্যে অগ্রিম জাকাত দেওয়া যায়, বছর শেষে সারা বছর যা জাকাত দেওয়া হয়েছে তা সমন্বয় করে নেওয়া যায় জাকাতের হিসাব থেকে।
অনেক ক্ষেত্রে নগদ অর্থ কম থাকে, কিন্তু স্বর্ণ থাকায় অথবা জাকাতযোগ্য অন্যান্য মাল থাকায় জাকাত দেওয়া ফরজ হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে মোট কত টাকা জাকাত ওয়াজিব হয়েছে তা হিসাব করে নিয়ে অল্প অল্প করে সারা বছরই জাকাত দেওয়া যায়। কারও যদি ২০,০০০ টাকা জাকাত আসে তাহলে তা কয়েক মাসেও ভাগ করে দিতে পারে। আবার এক বারেও দিতে পারে। একজনকে দিতে পারে বা একাধিক জনকেও দিতে পারে।
জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে টাকা বা সম্পদের পূর্ণ মালিকানা জাকাত গ্রহিতাকে দিতে হবে। তাই যেসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিমালিকানা হয় না যেমন–মসজিদ, রাস্তাঘাট, মাদ্রাসার স্থাপনা, কবরস্থান, এতিমখানার বিল্ডিং ইত্যাদি এসব তৈরির কাজে জাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে না।
মাদ্রাসার গরিব-এতিম ছাত্রদের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জাকাতের টাকা উঠিয়ে থাকেন। তাই মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতিনিধির কাছে গরিব এতিম ছাত্রদের কাছে জাকাতের টাকা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এসব টাকা সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের মালিকানায় দেবেন। পরবর্তী সময়ে ছাত্ররা তাদের থাকা-খাওয়া, বই-খাতা, চিকিৎসা, বস্ত্র বাবদ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে দিতে পারবে।
জাকাতের টাকায় ব্যক্তি বিশেষকে স্বাবলম্বী করার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার পুঁজিও দেওয়া যায়। ব্যক্তিমালিকানায় নলকূপ, কৃষি সরঞ্জামাদি দেওয়া যায়। গৃহনির্মাণ করে অভাবী ব্যক্তিকে মালিকও বানিয়ে দেওয়া যায় জাকাতের টাকায়। বিধবা, এতিমের যত্ন, তাদের চিকিৎসা, গরিব ছেলেমেয়ের বিয়ে, গরিবদের লেখাপড়া এমন যেকোনো জনকল্যাণমূলক কাজ করা যাবে জাকাতের টাকায়, শর্ত একটাই–অভাবীকে মালিক করে দিতে হবে জাকাতের টাকার।
এসএ/